নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
মাওবাদী মোকাবিলায় ‘ফার্স্ট বয়’-এর বিরুদ্ধেই এ বার ঢিলেমির অভিযোগ!
জেলে আটক মাওবাদী নেতারা যাতে আদালতে গিয়ে রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা আদায় করতে না পারে, তার জন্য রাজ্যকে আইন সংশোধন করতে বলে কেন্দ্র। এক মাসেও রাজ্য তৎপরতা না দেখানোয় দুশ্চিন্তায় কেন্দ্র। রাজ্যের ঢিলেমির সুযোগ নিতে কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে হামলায় অভিযুক্ত আফতাব আনসারিও রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা দাবি করে বলে মনে করছেন মন্ত্রকের কর্তারা।
অগস্টে ছত্রধর মাহাতো, মাওবাদী শীর্ষনেতা তেলুগু দীপক-সহ মোট ৭ জনকে রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা দেওয়ার জন্য রাজ্যকে আদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তখনই নড়েচড়ে বসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কারণ কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের উদাহরণ দেখিয়ে অন্য রাজ্যেও আটক মাওবাদীরা রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা আদায়ের চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। তা সত্যিও হয়। সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টের রায় দেখিয়ে কলকাতারই নগর দায়রা আদালতে সিপিআই (মাওবাদী) টেকনিক্যাল কমিটির নেতা সডানালা রামকৃষ্ণ-সহ ৯ জনকে রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা আদায় করে। মহারাষ্ট্রের জেলেও রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা আদায়ে অনশন করে মাওবাদীরা।
এর পরেই রাজ্যকে চিঠি লিখে উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অনুরোধ জানায়, বামফ্রন্টের আমলের কারা আইন সংশোধন করা হোক। কলকাতা হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এক মাসেও রাজ্যের জবাব আসেনি। কী বলছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার? কারা দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। রাজনৈতিক বন্দির সংজ্ঞা বদলে তা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হলেই কেন্দ্রকে জানানো হবে।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, “আইনটি রাজ্যের। দ্রুত তা সংশোধন করতে রাজ্যকেই তৎপর হতে হবে।” বিচারপতি কে এস অহলুওয়ালিয়াও রায় দেওয়ার সময় আইন সংশোধনের প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন।” কেন্দ্রের পরামর্শ, হাইকোর্টের এক জন বিচারপতির বেঞ্চ ওই রায় দেয়। আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রয়োজনে দু’জন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে আবেদন জানাতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যকে পরামর্শ দেওয়া হলেও, তা করা হয়নি কেন সেই প্রশ্ন তুলছে কেন্দ্র। বাম আমলের কারা আইনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে কেউ যদি অপরাধ করে, তাকে রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে। আফতাব আনসারির যুক্তি, সে-ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল। মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে আনসারি।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গলমহলে অবিশ্বাস্য উন্নতি, মাওবাদী হিংসায় মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নেমে আসায় পশ্চিমবঙ্গকে কার্যত ‘ফার্স্ট বয়’-এর তকমাই দেওয়া হয়েছিল। সেই ‘ফার্স্ট বয়’-এর তৎপরতা না দেখে এ বার কেন্দ্র হতাশ। |