চাষি চিনেই ধান কিনতে চাইছে সরকার
হায়ক মূল্যে ধান কেনার ক্ষেত্রে প্রকৃত চাষিদের চিহ্নিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। তার জন্য কী কী নথি প্রামাণ্য হিসেবে গণ্য হবে, বর্ধমানে গিয়ে তা জানালেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
সরকারের কাছে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে যাতে ফড়েরা ঢুকে পড়তে না পারে, তার জন্যই এ বার আগাম সতর্কতা নিতে চাইছে রাজ্য সরকার। এ বার কুইন্ট্যাল প্রতি মোটা ধানের সহায়ক মূল্য ১২৫০ টাকা ও সরু ধানের মূল্য ১২৮০ টাকা ধার্য হয়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
সোমবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে ধান সংগ্রহের জন্য অনুষ্ঠিত বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “যাঁদের কাছে কিষান ক্রেডিট কার্ড রয়েছে বা যাঁরা কৃষিবিমা করেছেন, তাঁরা তো চাষি হিসেবে চিহ্নিত হয়েই রয়েছেন। যাঁদের এই সব কোনও প্রমাণপত্র নেই, তাঁরা জমির পরচা নিয়ে আসবেন। যাঁদের তা-ও নেই, প্রয়োজনে কৃষি দফতর বা ব্লক অফিসের কর্মীরা তাঁদের চাষি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন।” এই অর্থবর্ষেই, আসন্ন মরসুম থেকে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
এ দিনের বৈঠকে চাষিদের চিহ্নিতকরণের প্রস্তাব প্রথমে তোলেন নতুন কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক। তাঁর কথায়, “গত বার এমনও ঘটেছে যে চাষিদের নাম করে ধান বিক্রি করেছেন ফড়েরা। চাষি সেজে ফড়েরা এক বার জি টি রোড অবরোধও করেন। তাতে আমি আটকে পড়ি। পরে তদন্তে জানা যায়, এদের মধ্যে এমন ১৯ জন ছিলেন, যাঁরা সরকারি সহায়ক মূল্যে ৫০০ থেকে ৮০০ কুইন্ট্যাল ধান চালকলে বিক্রি করেছেন।
সংস্কৃতি লোকমঞ্চে খাদ্যমন্ত্রী। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।
এঁরা চাষিদের কাছ থেকে ৮০০-৯০০ টাকা দরে ধান কিনেছিলেন। তাই এ বার যাঁদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে সেই লোকেরা চাষি কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।”
কৃষিমন্ত্রীর প্রস্তাব, সহায়ক মূল্যে ধান কেনার আগে দেখা দরকার, বিক্রেতা কোন ধরনের কতটা জমিতে চাষ করেছেন, সে জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর কত, কত ধান উৎপন্ন হয়েছে, চাষি তার কতটা বিক্রি করতে আগ্রহী। ফর্ম-এর আকারে এগুলি নথিভুক্ত করা হোক। খাদ্যমন্ত্রী সেই প্রস্তাব মেনে নেন। তবে কৃষি সমবায় প্রতিনিধি, চালকল মালিক, বিডিওদের পাশাপাশি জেলার তৃণমূল নেতা হাজির থাকলেও কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের এই বৈঠকে ডাকা হয়নি। সমবায় সমিতির প্রতিনিধিরা তাঁদের হয়রানির কথা জানান।
মেমারি-২ ব্লকের সমবায় সমিতির সদস্য এমদাদ আলি খান জানান, এখনও তাঁদের এলাকায় এমন কিছু চাষি রয়েছেন, যাঁরা গত বার সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করে চালকল থেকে পাওয়া চেক ভাঙাতে পারেননি। জামালপুরের সমবায় সমিতির কর্তা শেখ সাহেব আলি বলেন, “যে সব চাষিরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে চান, তাঁদের অনেককেই টোকেন দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এলাকায় অভাবী বিক্রি হয়েছে।”
আউশগ্রামের শিবদে গ্রামের সমবায় সমিতির সদস্য জগবন্ধু পাল খাদ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, তিনি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের (ইসিএসসি) অফিসারদের বকেয়া চেক দেওয়ার ব্যাপারে টালবাহানা বা দুর্ব্যবহার করা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ধান বিক্রির পরে চাষিদের বকেয়া টাকা মেটাতে না পেরে সমবায়ের কর্তাদের গ্রামছাড়া পর্যন্ত হতে হয়েছিল গত বার।
কালনার সমবায়ে সমিতির কর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “২০১১ সালের অক্টোবরে ধান কিনে টাকা পেতে আমাদের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে কেনা ধানের টাকা মেটানোর পরে ইসিএসসি সময়ে টাকা না দেওয়ায় তাঁদের সমিতিকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা সুদ গুনতে হয়েছে। এ ভাবে লোকসান দিতে গেলে বহু সমিতিই মুখ থুবড়ে পড়বে। গলসির বন্দুটিয়ার সমবায়ের অন্যতম কর্তা সনৎ ভট্টাচার্য বলেন, “সময়ে টাকা না পাওয়ায় আমাদের পক্ষে চাষিদের বকেয়া মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তারই জেরে আমাদের মারধর পর্যন্ত জুটেছে। বস্তা পর্যন্ত কিনতে হয়েছে আমাদের। অথচ এই বস্তা দেওয়ার কথা ছিল চালকলের।”
রাজ্যের নতুন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কবুল করেন, “চাষিরা বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক সমবায় বীরভূম বা বিহার থেকে ধান এনে বিক্রি করেছে সরকারকে। কেউ কেউ ৮০০-৯০০ বস্তাও বিক্রি করেছেন চাষি সেজে।” মেমারি ২-এর বিডিও স্মিতা সান্যাল জানান, তাঁর এলাকায় একটি চালকলের বিরুদ্ধে অনবরত চেক বাউন্সের অভিযোগ আসছিল। চাষিদের বলা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে। কিন্তু চাষিরা বকেয়া টাকা পাবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগে সেটা করতে চাননি। মন্তেশ্বরের বিডিও প্রদীপকুমার কারক বলেন, “এখনও একটি সমবায় সমিতির প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকা বকেয়া।”
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “গত বার চাল কেনায় যে সমস্যা হয়েছিল এ বার তার সমাধান করতে হবে। এ বার আমরা ২২ লক্ষ টন ধান কিনব। তা ধান কেনা হয়ে গেলে আরও ১০ লক্ষ টন কিনব। আমরা ভিন্ রাজ্যে চাল পাঠাতে চাইছি। তামিলনাড়ুতে আমরা ২০০০ টন চাল পাঠিয়েছি নমুনা হিসেবে। যদি ওরা ওই চালের মানে সন্তুষ্ট হয়, তা হলে শুধু ওই রাজ্য থেকেই আমরা ৫ লক্ষ টন চাল সরবরাহের বরাত পাব। কেরলেও আমরা চাল বিক্রি করতে চাইছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.