রোশনী মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। হাতের কাছে জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনে সাফল্যের দৃষ্টান্ত। সেই সাফল্যের বাড়তি উৎসাহেই পথে নামছে বিজেপি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখেই ৩০ নভেম্বর রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বিজেপি-র জনসভা। সেখানে মুখ্য বক্তা হিসাবে থাকার কথা লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের। সিপিএম ও তৃণমূলের টানাপোড়েনে বিধ্বস্ত এলাকাগুলি থেকে ওই সভায় বেশি জনসমাগম হবে বলে আশা করছেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। দাবি, দক্ষিণবঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, নদিয়ার তেহট্ট, করিমপুর, চাকদহ, বীরভূমের রামপুরহাট, সিউড়ি, ময়ূরেশ্বর, বাঁকুড়ার রামসাগর এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাগনান অঞ্চলে বরাবরই দলের জমি পোক্ত। ফলে ৩০ তারিখের সভায় ওই সব জায়গা থেকে প্রচুর সমর্থক আসবেন এর মধ্যে কোনও অভিনবত্ব নেই। কিন্তু হুগলির সিঙ্গুর, হরিপাল, আরামবাগ বা বধর্মানের পূর্বস্থলী, রায়না, খণ্ডঘোষ, কালনা অঞ্চলে আগে গেরুয়ার প্রভাব বিশেষ চোখে পড়ত না। এ বার ওই সমস্ত অঞ্চলই সুষমার সভার বহর বাড়াবে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
দীর্ঘ তিন দশকের বাম জমানায় হুগলি এবং বর্ধমানের বেশির ভাগ অঞ্চলই ছিল ‘লাল দুর্গ’। পরিবর্তনের হাওয়ায় ওই দুই জেলায় সবুজের অভিষেক হয়। কিন্তু বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের ব্যাখ্যা, ওই দুই জেলার যে সব এলাকা এখন লাল-সবুজের দ্বন্দ্বে বিক্ষত, সেগুলিতেই তাঁদের প্রভাব বেড়েছে। যেমন সিঙ্গুর। ন্যানো বিদায়ের পরে সেখানে নতুন কোনও শিল্প হয়নি। আবার অধিগৃহীত কৃষিজমিও ফিরে পাননি ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকরা। সব মিলিয়ে সিঙ্গুরে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, হরিপাল, আরামবাগ, পূর্বস্থলী, রায়না, খণ্ডঘোষ, কালনা অঞ্চলে আগে যাঁরা সিপিএমের হয়ে ‘সন্ত্রাস’ করতেন, এখন তাঁরাই ভিড়েছেন শাসক দলে। ফলে শান্তি ফেরেনি।
এই প্রেক্ষিতেই ওই সমস্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ তৃতীয় বিকল্প হিসাবে বিজেপি-র দিকে আসতে চাইছেন বলে মনে করছেন রাহুলবাবু। তাঁর কথায়, “আগে ওই সব জায়গা থেকে আমাদের কর্মসূচিতে বেশি মানুষ আসতেন না। ওখানে আমাদের সংগঠন প্রায় কিছুই ছিল না। কিন্তু এ বার সুষমাজি’র সভায় ওই সব অঞ্চল থেকেই বেশি ভিড় হবে বলে আশা করছি।” মুর্শিদাবাদেও কংগ্রেস এবং তৃণমূলের দ্বন্দ্বে ‘বিরক্ত’ আম জনতার একাংশ বিজেপি-কে পরীক্ষা করে দেখতে চাইছে বলে দলের রাজ্য সভাপতির বক্তব্য। তাই ওই জেলা থেকেও এ বার সুষমার সভায় অন্য বারের তুলনায় বেশি মানুষ আসবেন বলে বিজেপি-র আশা।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে চাঙ্গা করতে আন্দোলনের রাস্তাই বেছে নিয়েছেন রাহুলবাবু। রাজ্য রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজেপি-র ভোটের হারও কিঞ্চিৎ বেড়েছে। সাংগঠনিক নির্বাচনের আগে পাওয়া খতিয়ানে দেখা গিয়েছে, এ রাজ্যে বিজেপি-র সদস্য বেড়েছে।
এ রাজ্যে উত্থানের সাম্প্রতিকতম নজির তারা গড়েছে জঙ্গিপুর উপনির্বাচনে। সেখানে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়ে হয়েছে ১০.১%। জঙ্গিপুরের এই ফলের পর ৩০ নভেম্বরই প্রথম বড় কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিজেপি। রাহুলবাবু জানান, ৩০ তারিখের সভায় মূলত দক্ষিণবঙ্গের সমর্থকেরাই আসবেন। উত্তরবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করতে জানুয়ারি মাসে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিকে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। |