ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে বৈষম্য
সমীক্ষা শেষে বিড়ম্বনায় প্রাথমিক স্কুল সংসদ
স্কুলগুলোর পরিস্থিতি ঠিক কী, তা দেখতে সমীক্ষা শুরু করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। আর সমীক্ষায় যে তথ্য উঠে এল, তাতে বিড়ম্বনায় পড়ল সংসদই। বৈষ্যমের ছবিটা আরও স্পষ্ট হল। দেখা গেল, শহর ও শহরতলির স্কুলগুলোয় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নামমাত্র। শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। আর প্রত্যন্ত গ্রামে ছবিটা ঠিক উল্টো। স্কুলগুলোয় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তুলনায় বেশি। কিন্তু শিক্ষকের সংখ্যা কম! সমীক্ষার তথ্য দেখে সংসদেরই এক আধিকারিকের মন্তব্য, “সঙ্কটের কথা জানতাম। তবে তা যে এতটা গভীরে পৌঁছেছে, তা ধারনা ছিল না।”
সমস্যার কথা মানছেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মুর্মু। তাঁর কথায়, “পরিস্থিতি ঠিক কী, তা দেখতেই সমীক্ষা করা হয়েছে। এটা ঠিক, শহরের স্কুলগুলোয় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন। আর প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলগুলোয় কম শিক্ষক রয়েছেন। যে সব স্কুলে ১-২ জন শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হবে।” এ ক্ষেত্রে বেশি সংখ্যক শিক্ষক রয়েছে, এমন স্কুলের শিক্ষকদের আশপাশের স্কুলে গিয়ে পড়ানোর নির্দেশ দেবে সংসদ। ইতিমধ্যে শিক্ষা দফতর থেকেও এ সংক্রান্ত নির্দেশও এসে পৌঁছেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে। ডিসেম্বরেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বৈষ্যমের ছবিটা ঠিক কেমন? সংসদ সূত্রে খবর, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, খড়্গপুরের পাঁচবেড়িয়া প্রাথমিক স্কুলে ২১ জন ছাত্রছাত্রী পিছু একজন করে শিক্ষক রয়েছেন অথচ শালবনির পুকুরিয়াশোল প্রাথমিক স্কুলে মাত্র ১ জন শিক্ষিকা রয়েছেন। এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪৫। এই স্কুলের এক শিক্ষককে মাস কয়েক আগে বদলি করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪৬৮২টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। স্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ১৪ হাজার ৭৩২ জন। পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ৪০৩ জন। অর্থাৎ, শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা সবমিলিয়ে ১৬ হাজার ১৩৫। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সবমিলিয়ে ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ১৭১ জন। আগে স্কুলে ৪০ জন ছাত্রপিছু ১ জন করে শিক্ষক থাকতেন। এখন সেখানে ৩০ জন ছাত্রপিছু ১ জন করে শিক্ষক থাকার কথা।
পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার, জেলায় শিক্ষক- শিক্ষিকার সংখ্যা বেশিই রয়েছে। তাও গ্রামের অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলে সঙ্কট চলছে। সংসদ সূত্রে খবর, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২ হাজার ৫৭৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এমন স্কুলে রয়েছেন, যে স্কুলে তাঁদের থাকার প্রয়োজনই নেই।
কেমন? যেমন, একটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৬। আর শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। অর্থাৎ, এখানে ৯ জন ছাত্রছাত্র পিছু ১ জন শিক্ষক রয়েছেন! ছাত্র সংখ্যা যত কমই হোক না কেন প্রতি স্কুলে নূন্যতম ২ জন করে শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। ফলে, এই স্কুলে ২ জন অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। এ ভাবেই খড়্গপুরের পাঁচবেড়িয়া প্রাথমিকে আবার ৫ জন শিক্ষক অতিরিক্ত রয়েছেন।
কেন এই পরিস্থিতি? এ প্রশ্নেও সেই চাপানউতোর। তৃণমূলপন্থীদের অভিযোগ, সমস্যাটা তৈরি হয়েছে আগের সরকারের আমলেই। আর সিপিএমপন্থীদের দাবি, নতুন সরকারই সমস্যা বাড়াচ্ছে। গত ১৮ মাসে যথেচ্ছ বদলি করা হয়েছে। বদলির সময় স্কুলের সমস্যা দেখা হয়নি, শুধু দেখা হয়েছে যিনি বদলির আবেদন করেছেন, তিনি তৃণমূলপন্থী কি না, এটুকুই।
এই বদলি ঘিরে একটি ‘চক্র’ গড়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ। না-হলে যেখানে ২ জন শিক্ষক ছিলেন, সেই স্কুল থেকেও কেন ১ জন শিক্ষককে বদলি করা হবে? প্রশ্নের উত্তর নেই সংসদ সভাপতির কাছেও। সংসদেরই এক সূত্রে খবর, রাজ্যে পালাবদলের আগে জেলায় ১ জন করে শিক্ষক রয়েছেন, এমন স্কুলের সংখ্যা ছিল ৮৩। আর এই সময়ের মধ্যে তা বেড়ে হয়েছে ১০৪। এমন স্কুলের অধিকাংশ জঙ্গলমহল এলাকায় রয়েছে। সংসদ চেয়ারম্যান বলেন, “আসলে সমস্যাটা শুরু হয়েছে আগে থেকে। শিক্ষক নিয়োগের সময় সব দিক খতিয়ে দেখা হলে এই সমস্যা হত না।” তাঁর কথায়, “১৫০ কিলোমিটার যাতায়াত করে তো কারও পক্ষে স্কুলে পড়ানো সম্ভব নয়।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শেষ ২০১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। কেন তখন স্কুলগুলোর পরিস্থিতি দেখে শিক্ষক নিয়োগ হল না? সেই সময় যিনি সংসদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই ব্রজগোপাল পড়িয়া অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তর দিতে নারাজ। সাফ জানালেন, “আমি কিছু বলব না।” তবে তৃণমূলপন্থী এক শিক্ষকের কথায়, “দুর্নীতি- স্বজনপোষন চলছেই। আগের সংসদ ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষার স্বার্থ দেখেনি। এখনও তাই। বদলি- নীতি নেই। যেই স্কুলে ২ জন শিক্ষক ছিলেন, সেখান থেকেও ১ জনকে বদলি করা হয়েছে। ফলে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে।”
সংসদের সমীক্ষার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.