জট কাটাতে আজ বৈঠক পূর্বে
দেড় বছরেও বাড়ি হল না মৎস্যজীবীদের
পভোক্তাদের তালিকা নিয়ে জটমামলা-মোকদ্দমা-বিক্ষোভ। তারই মাঝে পড়ে টাকা বরাদ্দের দেড় বছর পরও ‘আদর্শ গ্রাম’ প্রকল্পে বাড়ি হল না পূর্ব মেদিনীপুরের ১৩২ জন মৎস্যজীবীর। সম্প্রতি আদালতের ঝামেলা মিটলেও কাজ শুরু করা যায়নি। মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা বিনয়কুমার দত্ত বলেন, “প্রায় দু’বছর আগে ওই প্রকল্পে প্রতিটি বাড়ি তৈরির জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। মাঝের সময়ে বাড়ি তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। ফলে ওই টাকায় এখন একই বাড়ি তৈরির কাজ প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়া উপভোক্তাদের তালিকা নিয়েও গোলমাল রয়েছে। ফলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।” জট কাটাতে আজ, ২৭ নভেম্বর জেলা পরিষদে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘আদর্শ গ্রাম’ প্রকল্পে ভগবানপুর-১ ব্লকের সিমুলিয়া, বেউদিয়া ও ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৩২টি পরিবারকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য রাজ্যের মৎস্য দফতর ৬৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। ২০১১ সালের ২১ জানুয়ারি অর্থ বরাদ্দের পর মৎস্য দফতর টেন্ডার ডেকে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন মৎস্য দফতর উপভোক্তাদের যে তালিকা তৈরি করে, তাতে অনিয়ম হয়েছে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেন ভগবানপুর-১ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত সিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সবিতা প্রধান। সবিতাদেবীর অভিযোগ, “তালিকায় থাকা ১৩২টি পরিবারের মধ্যে আমার পঞ্চায়েত এলাকার যে ৬৩ জনের নাম রয়েছে, তাঁদের কয়েকজন আগেই ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন। আবার কয়েকজন উপভোক্তা মৎস্যজীবীই নন। মৎস্য দফতরের নামে স্থানীয় বামফ্রন্ট নেতারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ওই তালিকা তৈরি করেছিলেন। তাই আমরা ওই তালিকায় আপত্তি জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম।”
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। ইতিমধ্যে মার্চ মাসে বিধানসভা নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হওয়ায় কাজ স্থগিত হয়ে যায়। বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস পরও বাড়ি তৈরির কাজ শুরু না হওয়ায় আবার উপভোক্তাদের মধ্যে ৬৮ জন ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বুঝে মৎস্য দফতর উপভোক্তাদের তালিকা সংশোধন করে হাইকোর্টে জমা দেয়। এ দিকে চলতি বছর অগস্ট মাসে তৃণমূল পরিচালিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও মৎস্য কর্মাধক্ষ্যের মধ্যস্থতায় সিমুলিয়ার পঞ্চায়েত প্রধান হাইকোর্টে মামলা প্রত্যাহার করে নেন। ফলে সংশোধিত তালিকা আর গৃহীত হয়নি। উচ্চ আদালত যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি তৈরি করার নির্দেশ দেয় মৎস্য দফতরকে।
কাজ শুরু হয়নি এখনও। মৎস্য দফতরের বক্তব্য, একবার তালিকা সংশোধন করা হল। অথচ, তা কার্যকরী করার উপায় নেই। তার উপরে ওই টাকায় বাড়ি করা অসম্ভব। সব মিলিয়ে যে জট তৈরি হয়েছে তাতে কাজ করা মুশকিল।
এ দিকে, প্রকল্পটি বিশ বাঁও জলে চলে যাওয়ার জন্য সরাসরি মৎস্য দফতরকেই দায়ী করছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব ভৌমিক বলেন,“উপভোক্তাদের তালিকা তৈরির সময় মৎস্য দফতর জেলা পরিষদকে কিছু জানায়নি। তা সত্ত্বেও মামলা নিয়ে যখন সমস্যা হল, তখন ঝামেলা মেটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একাধিক বার আলোচনায় বসেছি। বাড়ি তৈরির সমস্যা কাটাতে ফের বৈঠক করছি আমরা।”
সেই সময় মৎস্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা কিরণময় নন্দ। মৎস্য দফতরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বাম শরিক সমাজবাদী পার্টির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক রঞ্জিত মান্না বলেন, “স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনা করেই মৎস্য দফতর তালিকা বানিয়েছিল। তবু অকারণ জটিলতা বাড়াতে মামলা করে ওরা। পরে মামলা প্রত্যাহারও করে নেয়। সময় নষ্ট হওয়ার জন্য বাড়ির দাম যেটুকু বেড়েছে, তা জেলা পরিষদ নিজস্ব তহবিল থেকে দিয়ে দিতে পারে।”
রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছেই। দরিদ্র মৎস্যজীবীদের কথা ভেবে দেখার কেউ নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.