ভারতে তাঁর ছয় বছরের কোচিং জীবনে সবথেকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আপাতত রয়েছেন করিম বেঞ্চারিফা!
এমনিতে মাঝপথে সালগাওকর ছাড়ার পরে চূড়ান্ত বিতর্কের মধ্যেই গোয়ায় খেলতে আসতে হল। তার উপর বুধবার প্রতিপক্ষ হাইপ্রোফাইল ডেম্পো। তার উপর মোহনবাগানে চোটের বহর যে ভাবে বাড়ছে তাতে ঘুম ছুটেছে তাঁর। রবিবার পুণেতে মুম্বই এফসি ম্যাচে নামার আগে চায়ের টেবিলে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন তিন গোলে জিতবেন। ফিরলেন এক পয়েন্ট নিয়ে। সঙ্গে নবি-সহ চার ফুটবলারের পরের ম্যাচে অনিশ্চিত হয়ে পড়ার ধাক্কা। যাতে এতটাই মুষড়ে পড়েছেন দেশের সবথেকে দামি কোচ যে, গতকাল মাঝরাত পর্যন্ত জেগে কাটিয়েছেন। ফোন করেছেন গোয়ায় আর নিজের দলের রিহ্যাব বিশেষজ্ঞ জোনাথন কর্নারের ঘরে। দু’টো বিষয় জানতে।
এক) ডেম্পো শিবিরের চোটআঘাতের টাটকা খবর কী?
দুই) নিজের দলের চোট পাওয়া প্লেয়ারদের মধ্যে গোয়ায় ক’জনকে পাওয়া যাবে।
উত্তর পেয়ে খুশি-অখুশি দু’টোই করিম। আর্মান্দো কোলাসোর টিমের বিদেশি স্ট্রাইকার কোকো চোট পেয়ে খেলছেন না। শুধু সুয়েকা ছাড়া কোনও বিদেশি নেই আই লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচের হাতে জেনে স্বস্তি পাচ্ছেন করিম। আবার জোনাথনের উত্তরে আশঙ্কা বেড়েছে। কারণ, ডেম্পোর বিরুদ্ধে স্টপার ইচের খেলার সম্ভাবনা প্রায় নেই। রহিম নবির সম্ভাবনাও ফিফটি-ফিফটি। নির্মল-ডেনসনরা জোর করে খেলে দিতে পারেন হয়তো। গোয়া যাওয়ার জন্য মুম্বইগামী টিমবাসে সবার আগে উঠে বসলেন করিম। তার আগে থমথমে গলায় বলছিলেন, “আমি এ দেশে কোচিং করতে আসার পর কখনও শুরুতে কোনও টিম নিয়ে এ রকম সমস্যায় পড়িনি। এত চোট-আঘাত। আমি তো ম্যাজিসিয়ান নই। তবু বলছি, আমি হাল ছাড়ার লোক নই।”
এ দিন সন্ধেয় মারগাও এসে পৌঁছল মোহনবাগান। সাত ঘণ্টার বাস ও বিমানযাত্রায় নবিদের অবস্থা কাহিল। কোলভার সমুদ্রসৈকতের কাছে এক রিসর্টে উঠেছেন ওডাফারা। ক্লান্ত ফুটবলারদের বিশ্রামে পাঠিয়ে নিজের পুরনো শহরের যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে মরক্কান কোচ শুরু করে দিয়েছেন নানা অঙ্ক কষা। কিন্তু কাদের নিয়ে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করবেন মোহন-কোচ? “মঙ্গলবার সকালে সবাইকে অনুশীলনে দেখব। কোচের স্ট্র্যাটেজি তৈরি হয় কোন ফুটবলার, কেমন ফুটবলার হাতে আছে তার উপর,” বলে দেন বরাবর বাস্তবের জমিতে ঘোরাফেরা করা করিম। ফের ৪-৪-২ ফর্মেশনে কি মোহনবাগান ফিরবে? বিশেষ করে স্ট্যানলি যখন ইস্টবেঙ্গলের পেন যে জায়গাটায় খেলেন, সেই পজিশনে নেমে ব্যর্থ হচ্ছেন। বাগানের ‘লাকি’ কোচ হিসেবে পরিচিত করিম বলেন, “নবি-ইচেকে পেলে এক রকম ফর্মেশন হবে। না হলে অন্য রকম।”
মুম্বই ম্যাচ নিয়ে করিম কথা বলতে না চাইলেও ফুটবলারদের মধ্যে কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। হোটেলের লবিতে বসে ওডাফা যেমন বললেন, “এই দু’পয়েন্ট চলে যাওয়াটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে আমাদের বড় ক্ষতি। আমাদের টিম আগের ম্যাচগুলোর মতো খেলতে পারেনি।” কেন পারেনি? ওডাফার পিছনে পেন্ডুলামের মতো যাঁর দোলার কথা উইথড্রয়াল ফরোয়ার্ডে, সেই স্ট্যানলি বললেন, “মাঠটা ছোট ছিল। আমি তো বল ধরে খেলার জায়গাই পেলাম না! গোয়ায় সেটা হবে না।” কলকাতায় সালগাওকর ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ডেনসন-নির্মল ছেত্রীরা মানছেন, সমঝোতা তৈরি হয়ে রক্ষণটা জমাট বেঁধে উঠছিল। সেটা নষ্ট হয়ে যাওয়াতেই সমস্যা। বিশেষ করে নবি উইং থেকে পিছনে চলে আসায় আক্রমণ দানা বাঁধেনি মুম্বই ম্যাচে। এক কোণে বসে থাকা গোলকিপার শিল্টন পাল মাথা নিচু করে সব শুনছিলেন। ইয়াকুবুর দুর্দান্ত শট বাঁচিয়েও তিনি দলে দোষী হয়ে গিয়েছেন বাজে গোল হজম করে। ডেম্পো গোলকিপার শুভাশিস রায়চৌধুরী বলছিলেন, “শিল্টন হঠাৎ কেন এগিয়ে এল বুঝতে পারলাম না। জায়গায় থাকলে গোলটা বাঁচাতে পারত। ভালই তো খেলছিল।”
বাগান ফুটবলারররা আগের দিনের ম্যাচের ময়নাতদন্ত করলেও তাঁদের কোচ সামনের দিকে তাকাতে চাইছেন। করিম জানেন, ডেম্পো ম্যাচ জিততে পারলে অনেক প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে দিতে পারবেন তিনি। থামিয়ে দিতে পারবেন ঢেউয়ের মতো ওঠা নানা বিতর্ক। আরবসাগরের ঢেউ গুনতে গুনতে করিমচাচা কী স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেন ডেম্পো-বধের, তাঁর উপর কিন্তু নির্ভর করছে ওডাফাদের ভবিষ্যৎ। হয়তো ৯ ডিসেম্বর কলকাতা ডার্বিরও। |