সব শেষের কথাটাই সবার আগে বলে ফেলি। ভারতীয় স্পিনাররা নিজেদের যতটা ভাল মনে করে, আসলে ওরা ততটা ভাল নয়। সাধারণ মানুষও ওদের যতটা ভাল স্পিনার বলে ভাবে, ওরা ততটাও ভাল নয়। ভারত নিশ্চয়ই অনিল কুম্বলেকে মিস করছে। ভারতীয় স্পিনাররা দ্বিতীয় টেস্টে প্রচুর শর্ট করেছে। যেখানে মন্টি পানেসর আর গ্রেম সোয়ান অনেক ভাল জায়গায় বল ফেলেছে। ফুল লেংথ করেছে। জোরের ওপর আর্মার দিয়েছে। আর সোজা কথায়, ভারতীয় স্পিনারদের তুলনায় অনেক বেশি বল ঘুরিয়েছে।
সাবধান কলকাতা, মন্টিরা এসে পড়ল বলে!
মুম্বইয়ে বিশাল জয়ের মাধ্যমে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে ইংল্যান্ড শুধু নিজেদের চুরমার হয়ে যাওয়া গৌরব পুনরুদ্ধারই করেনি। প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ভারত তাদের জন্যই তৈরি একেবারে আদর্শ পরিবেশেও কী ভুলভালই না খেলেছে! ইংল্যান্ডের মনে এখন বিশ্বাস জমতেই পারে যে, উপমহাদেশের পিচেও ওরা যথেষ্ট ভাল খেলার ক্ষমতা রাখে। এটাও আমাদের দেশের ক্রিকেটাররা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবে যে, ঘূর্ণি উইকেটে স্পিনারদের ওপর ভরসা রেখে প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানোর যে চিরন্তন ভারতীয় স্ট্র্যাটেজি, সেটাও এখন আর অব্যর্থ স্ট্র্যাটেজি নয়।
|
গুরু-শিষ্য। ইংল্যান্ডের পাকিস্তানি স্পিন কোচের সঙ্গে পঞ্জাবি স্পিনার।
মুস্তাক আমেদ ও মন্টি পানেসর। ছবি: উৎপল সরকার |
পরের সপ্তাহে কলকাতায় তৃতীয় টেস্ট। ভারতকে ওখানে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে যে, মুম্বইয়ের থেকে ওদের অনেক ভাল ভাবে পরিবেশকে কাজে লাগানোটা ভীষণ দরকার। ওয়াংখেড়েতে ভারত টস জিতে আগে ব্যাট করেছিল এমন একটা পিচে যেখানে কুড়ি দিন আগেই ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ম্যাচ হয়েছে। যে ম্যাচে সচিন সেঞ্চুরি করেছিল। মনে হয়েছিল, এম এস ধোনি যে রকমটা চাইছে, ঠিক সে রকমই উইকেট ওটা।
হ্যাঁ, টস জেতার সুবিধেটা ভারত অধিনায়ক ঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। কিংবা প্রথমে ব্যাট করার সুবিধেটা ভারতের আরও ভাল ভাবে সদ্ব্যবহার করা দরকার ছিল। কিন্তু একবার ভাবুন তো, ওদের কয়েক জন অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান নিজের কাজটা কী রকম দায়সারা ভাবে করেছে? পূজারা বাচ্চা ছেলেটা নিশ্চয়ই প্রত্যেক ইনিংসেই সেঞ্চুরি করতে পারবে না! পারবে কি? কেন সচিন স্পিনারের বিরুদ্ধে ব্যাটের মুখ খুলে দেবে? কেন বিরাট কোহলি ভারতের উজ্জ্বলতম আশা একটা হাফভলিকে কভারে লোপ্পা তুলে দেবে? কেন বরাবরের নড়বড়ে টেস্ট ব্যাট যুবরাজ সিংহ ভুল লাইনে খেলবে? সচিনের মতোই ব্যাটের কানায় লাগাবে?
উল্টো দিকে পিটারসেন আর কুকের অসাধারণ ব্যাটিং-দাপটের দিকে একবার তাকান। খাঁটি ম্যাজিক! কুক স্বপ্নের ওপেনিং ব্যাটসম্যান। চূড়ান্ত একাগ্রতা, প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার উজ্জ্বল ছবি। বাঁ-হাতি সানি গাওস্কর যেন! সাতাশ বছর বয়সেই ২২টা টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। যার অর্থ, যে সময়ের ভেতর কুক এতগুলো সেঞ্চুরি করেছে, সানিও পারেনি।
কেপি-র কথায় বলি, মুম্বইয়ে ওর প্রথম পঞ্চাশ রান আমার দেখা কেপি-র সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত হাফসেঞ্চুরি। একটাও ভুল শট খেলেনি। সত্যিকারের অনবদ্য ব্যাপার। যারা কেপি-র ব্যাটিংয়ের কাটাছেড়া করেছে, তারা জানে স্পিনের বিরুদ্ধে ও অনসাইডে খেলে। কিন্তু মুম্বইয়ে কেপি মিড-অফ থেকে একস্ট্রা কভারের ভেতর ওর শটগুলো খেলেছে। স্পিনের সঙ্গে খেললেই যেটা সম্ভব। |
ইংরেজ স্পিনাররা |
১২৫.২ ওভার বল করে ৩২৯ রান দিয়ে সংগ্রহ ১৯ উইকেট।
স্ট্রাইক রেট ১৭.৩২। ইকনমি রেট ২.৬২ |
|
ভারতীয় স্পিনাররা |
১১৬.১ ওভার বল করে ৪১৮ রান দিয়ে সংগ্রহ ৯ উইকেট।
স্ট্রাইক রেট ৪৬.৪৪। ইকনমি রেট ৩.৬০। |
|
|