নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কেএমডিএ-এ প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলল হাওড়া জেলা পরিষদ।
জেলা পরিষদের সূত্রের খবর, বছর দেড়েক ধরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা তারা কেএমডিএ-র কাছে বকেয়া আছে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম অবশ্য বলেন, “এই সমস্যার কথা আমাকে হাওড়া জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কেউ জানাননি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর করব।” কেএমডিএ-র তরফে অবশ্য সমস্যার কথা স্বীকার করা হয়েছে। সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, তহবিল-সংক্রান্ত একটি সমস্যার জন্য জেলা পরিষদকে প্রাপ্য মেটানো যাচ্ছিল না। সমস্যা মিটেছে। শীঘ্র জেলা পরিষদকে টাকা মেটানো হবে।
সাঁকরাইল, ডোমজুড়, পাঁচলা, বালি-জগাছা এবং উলুবেড়িয়া-২ পাঁচটি ব্লকের মোট ৩৫টি পঞ্চায়েত পুরোপুরি এবং ৯টি পঞ্চায়েতের আংশিক মৌজা কেএমডিএ-এর অধীনে রয়েছে। এই সব এলাকার পানীয় জল সরবরাহ এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়ন-সংক্রান্ত কাজকর্ম কেএমডিএ-র করার কথা। মাঝে মাঝে তারা সরাসরি এই সব কাজ করে। কখনও তারা জেলা পরিষদকে দিয়েও কাজ করায়।
২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি কেএমডিএ জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা জেলা পরিষদের মাধ্যমে ৭ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করবে। জেলা পরিষদ যেন ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তাদের কাছে পরিকল্পনা করে পাঠায়। অন্য দিকে, জেলা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় এই টাকার সঙ্গে তাদের নিজস্ব তহবিলের ১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকাও খরচ করবে। দু’টি তহবিল মিলিয়ে জেলা পরিষদ কেএমডিএ-র কাছে ৮ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার একটি পরিকল্পনা পাঠায়। কেএমডিএ পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে এবং তাদের প্রদেয় ৭ কোটি টাকার মধ্যে সাড়ে তিন কোটি টাকা জেলা পরিষদকে দিয়ে দেয়। বাকি টাকা সব কাজ শেষ হওয়ার পর দেওয়া হবে বলে কেএমডিএ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
জেলা পরিষদের দাবি, জুলাই মাসের মধ্যে তারা রাস্তাঘাট মেরামতির কাজ শেষ করে ফেলে। পানীয় জলের পাইপলাইন সংস্কারের কাজটি অবশ্য তারা কেএমডব্লিউএসএ-কে দিয়ে করাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজ শেষ করার পরে তারা ২০১১ সালের ৬ জুলাই ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দেয়। ২২ জুলাই কেএমডিএ-এর পক্ষ থেকে কাজগুলি পরিদর্শন করা হয়। এর পরেই বাকি টাকা কেএমডিএ-র জেলা পরিষদকে মিটিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু তা আর আসেনি বলে জেলা পরিষদের অভিযোগ।
জেলাসভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেএমডিএ-র কাছে আমরা অন্তত ১০টি চিঠি লিখেছি পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রায় দেড় বছর হতে চলল। আমরা টাকা পাচ্ছি না।” টাকা না-পাওয়ায় ঠিকাদারদের পাওনাও মেটানো যাচ্ছে না বলে মীনাদেবী জানান। তিনি বলেন, “টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েই আমরা কাজগুলি করি। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়া পরেও প্রাপ্য না মেলায় বেশ সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
পানীয় জলের পাইপলাইন সংস্কার করার জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কেএমডব্লিইএসএ কাজটি করবে। জেলা পরিষদের এক কর্তার বক্তব্য, কেএমডব্লিউএসএ সাফ জানিয়েছে, তাদের ভাঁড়ার কার্যত শূন্য। ফলে অগ্রিম না-পেলে তারা কাজটি করবে না। এই অবস্থায় টাকার অভাবে পানীয় জলের পাইপলাইন সংস্কারের কাজটিও শুরু করা যায়নি।
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিয়েছি। কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে কাজগুলি পরিদশর্ন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন আমাদের টাকা আটকে আছে বুঝতে পারছি না। প্রতিবারেই কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে আমাদের বলা হচ্ছে খুব শীঘ্র টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।” জেলা পরিষদ কর্তাদের একাংশের সন্দেহ, সিপিএম-শাসিত জেলা পরিষদ বলেই তাঁদের প্রতি এই আচরণ।
এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “উন্নয়নের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে বিষয়টি আমি জানিই না।” অন্য দিকে, কেএমডিএ-এর মুখ্য প্রশাসনিক আধিকারিক বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “আসলে একটা বিশেষ তহবিলের টাকা এলে সেখান থেকে তা জেলা পরিষদকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকা আসতে দেরি হয়েছে। ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তহবিল এসে গিয়েছে। জেলা পরিষদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়া হবে।” |