গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • ডানকুনি |
এ এক অন্য জমিজট।
ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ, ১৯.৫ কিলোমিটার রেলপথের শিলান্যাস হয়েছিল বছর তিনেক আগে। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারকেশ্বর-ফুরফুরা শরিফের মধ্যে ‘সম্প্রীতির সংযোগ’ ঘটিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তিন বছরেই ওই পথে ট্রেন ছুটবে। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা আটকে গিয়েছে জমি-জটে।
পুরনো গৎ? না, এখানে রয়েছে অন্য চমক। প্রকল্পের জন্য ইচ্ছুক ১৬০০-রও বেশি জমিদাতা, যাঁরা বছরখানেক আগেই সম্মতিপত্র দিয়ে রেখেছেন রেলকে, তাঁরা এখন জমি দেবার সুযোগই পাচ্ছেন না। কারণ, তাঁরা এত দিন যাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন রেলের সেই অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি সম্প্রতি বদলি হয়ে গিয়েছেন। তাঁর জায়গায় রেল কাউকে নিয়োগও করেনি। জমি দানের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি হয়ে যাওয়ার পরেও প্রকল্পের জন্য জমি দিতে ইচ্ছুক পরিবারগুলি তাই দরখাস্তই জমা দিতে পারছেন না। কুমিরমোড়ার বাসিন্দা অনাথ ঘোষ বলেন, “রেলের বিজ্ঞাপন মেনে প্রকল্পে জন্য জমি দিতে উৎসাহী আমি। কিন্তু দেব কাকে? রেলের কেউই তো এখন সে ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করছেন না।” |
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ৬২৮টি পরিবার জমি দিয়ে ক্ষতিপূরণ পেয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন অন্তত ১৯৫জন। আরও অনেকে চাকরির দরখাস্ত করেছেন রেলের কাছে। কারণ, তদানীন্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি ছিল, পরিবারের অন্তত এক জনের চাকরি হবে রেলে। কিন্তু সেই প্রশ্নটির নিষ্পত্তি হয়নি চারশোরও বেশি জমিদাতার ক্ষেত্রে। হুগলির মশাটের বাসিন্দা বিপ্লব হাজরা বলেন, “জমি তো দিয়েছি। কিন্তু চাকরির প্রশ্ন তো এখনও ঝুলে।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪৮ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে প্রায় ২২৪.৭৩ একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত জমির পরিমাণ মাত্র ৫৫. ৮১ একর। কারণ, জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে গত বছরই নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে রেল। পাশাপাশি, রাজ্য সরকার তাদের ঘোষিত জমি নীতিতে অনড়। জমি অধিগ্রহণ করে তারা যে রেলের হাতে তুলে দেবে এ সম্ভাবনাও ক্ষীণ। জমি অধিগ্রহণ থেকে হাত-গোটানোর সরকারি নীতির ফলে কাজ ক্রমশ পিছিয়েছে।
রেল বোর্ডের এক কর্তা জানান, আপাতত প্রস্তাবিত ওই রেলপথের উপরে ‘ওভারহেডের তার’ নয়, ঝুলে রয়েছে বড়সড় ‘প্রশ্ন চিহ্ন’। “ওই প্রকল্পের কাজ করছিল যে ঠিকাদার সংস্থা চলতি মাসেই তাদের মেয়াদ ফুরোচ্ছে। মশাটে ওই সংস্থার একটা নাম-কা-ওয়াস্তে সাইট অফিস রয়েছে। কিন্তু তাও গুটিয়ে নেওয়ার মুখে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জাঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জমিদাতা পরিবারগুলির হাতে চেক তুলে দিয়েছিলেন। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় রেললাইন পাতার জন্য মাটি ফেলে উঁচুও করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে কাজ বিশেষ এগোয়নি। মুকুল রায় রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে সে কাজে সামান্য গতি এসেছিল। কিন্তু তাও দিন কয়েকের জন্য। জমি জটে তা অচিরেই থমকে যায়। রেলপ্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীরও হুগলির ডানকুনি থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফুরফুরাশরিফের মধ্যে প্রস্তাবিত ওই রেলপথ তৈরির কাজ কবে শেষ হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি।
রেলের জমি দিতে ইচ্ছুক নাগরিক রয়েছেন, রয়েছে রেল লাইন তৈরির বরাদ্দ টাকাও। তবু হচ্ছে না কাজ। এই জট ছাড়ানোর সাধ্য কার? |