কবি সুভাষ কোথায় যেন? নাকতলায় যেতে হলে কোথাকার টিকিট কাটতে হবে? গীতাঞ্জলি, না কবি নজরুল? বৃজি-টাই কি শহিদ ক্ষুদিরাম? এমন হরেক প্রশ্নে এখনও বিভ্রান্ত মেট্রোর যাত্রীরা। টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া রুটে মেট্রো স্টেশনগুলির নাম বদল হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের একটি বড় অংশ এখনও গড়িয়া বাজার, নিউ গড়িয়া, নাকতলা, বৃজি, টালিগঞ্জ ইত্যাদি নামেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তাই টিকিট কাটতে গিয়ে বারবার তাঁদের অসুবিধার মুখে পড়তে হয়। এ বার অবশেষে তার থেকে মুক্তির আশ্বাস মিলল।
সোমবার মেট্রোর এক অনুষ্ঠানে নতুন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী জানান, ওই নামের পাশে এলাকার নামও লিখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোকে বিমানবন্দর নিয়ে যাওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেছেন।
এ দিনের অনুষ্ঠানটি ছিল কবি সুভাষ স্টেশন সংযোগকারী পূর্ব রেলের নিউ গড়িয়া হল্ট স্টেশনের উদ্বোধন উপলক্ষে। অধীরবাবু বলেন, “বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে মেট্রো স্টেশনের নামকরণ হয়েছে। তবে এতে কোন এলাকার স্টেশন, বুঝতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয়। তাই ওই নামের পাশে নির্দিষ্ট এলাকার নামও লেখার ব্যবস্থা করতে বলেছি।” |
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে নেমে কাজের অগ্রগতি দেখছেন
রেলের প্রতিমন্ত্রী অধীর চোধুরী। সোমবার বেলেঘাটায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য রেল প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “নামকরণের আইন আছে। তা জানা নেই বলেই তিনি এ রকম বলছেন। নামকরণের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে রেল তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠায়। সেখানে অনুমোদন পেলে তবে নামকরণ চূড়ান্ত হয়। এখনকার রেল প্রতিমন্ত্রী নাম পাল্টানোর আগে কি রাজ্যের অনুমতি নিয়েছেন?” মেট্রো রেল সূত্রে কিন্তু জানা যায়, টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটে স্টেশনগুলির নামকরণ সংক্রান্ত কোনও চূড়ান্ত নির্দেশ এখনও তাদের হাতে আসেনি। তবু শহিদ ক্ষুদিরাম, কবি সুভাষ, মহানায়ক উত্তমকুমার ইত্যাদি নামেই স্টেশনগুলি চালু হয়ে গিয়েছে। টিকিটও দেওয়া হচ্ছে। মেট্রোর এক মুখপাত্র বলেন, “এ সব ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সুপারিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে যায় এবং সেখান থেকে রাজ্যের কাছে ফেরত এলে রাজ্য তা মেট্রোকে জানায়। এখনও সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। তবে স্টেশনগুলি চালু হয়ে যাওয়ায় তদানীন্তন রেলমন্ত্রীর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সুপারিশ অনুযায়ী স্টেশনগুলির নাম চালু হয়েছে।” বিতর্ক উঠেছে তা নিয়েও। মুকুলবাবু অবশ্য এ প্রশ্নে কোনও কথা বলেননি। তবে অধীরবাবু বলেন, “ওঁরা বুঝতে ভুল করছেন। আমি নাম পরিবর্তন করছি না। জায়গার নামটা গুরুত্বপূর্ণ বলে সেটি সঙ্গে লিখতে বলেছি। আমি আইনটা জানি।” |
|
কোন এলাকা |
স্টেশনের নাম |
নিউ গড়িয়া |
কবি সুভাষ |
বৃজি |
শহিদ ক্ষুদিরাম |
গড়িয়া বাজার |
কবি নজরুল |
নাকতলা |
গীতাঞ্জলি |
বাঁশদ্রোণী |
মাস্টারদা সূর্য সেন |
কুঁদঘাট |
নেতাজি |
টালিগঞ্জ |
মহানায়ক উত্তমকুমার |
|
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর (কেএমআরসি) বেলেঘাটা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কাটার কাজও শুরু করান রেল প্রতিমন্ত্রী। বেলেঘাটায় কেএমআরসি-র অফিসে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো বাংলার গর্ব। নদীর তলা দিয়ে মেট্রো যাবে, এটা ভাবাই যায় না। বিধাননগর নয়, এই মেট্রোকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাব। শহর বাড়ছে। আগে থেকেই পরিবহণ ব্যবস্থা করতে হবে।” তবে অনেক জায়গায় এই প্রকল্পে জমির জট রয়েছে। পাশাপাশি, আরও সম্প্রসারণ করতে গেলে জমির প্রয়োজন। তখন কী হবে? উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে আমরা রাজ্যকে জমির জট ছাড়ানোর জন্য জানাব। প্রকল্পটি তো রাজ্যেরই। জমি নিয়ে জটিলতা হোক, চাই না।” ৩০ নভেম্বর দিল্লিতে বৈঠক হবে। সেখানে এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী। অধীরবাবু বলেন, “আমি ও সুজনদা একসঙ্গে রেলের নানা প্রকল্পের জন্য রেলমন্ত্রীদের কাছে বিভিন্ন সময়ে দরবার করেছি। সাংসদ থাকাকালীন সুজনদা উন্নয়নের কাজে বহু সাহায্য করেছেন।” কবি সুভাষ স্টেশনের কাছে সংলগ্ন টার্মিনাল তৈরির জন্য সুজনবাবু অনুরোধ করেছেন বলে জানান তিনি। প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচিত হবে, আশ্বাস অধীরের। |