গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষে তৃণমূলের তিন জনের আহত হওয়ার অভিযোগ উঠল পাণ্ডবেশ্বরে। তাঁদের মধ্যে দু’জন ইসিএলের কাল্লা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সোমবার পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহি খোলামুখ খনিতে ঘটনাটি ঘটে। দু’পক্ষের তরফেই পাণ্ডবেশ্বর থানায় বোমাবাজি, মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাণ্ডবেশ্বর পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত রবিবার বিকেলে। বাসিন্দারা জানান, বিকেল ৫টা নাগাদ খোট্টাডিহির ‘হোলপ্যাক’ চালক চন্দন পাল ওই খনিতেই ঠিকায় নিযুক্ত একটি ডাম্পারে ধাক্কা মারেন। ডাম্পারটির মালিক স্থানীয় বিলপাহাড়ি এলাকার সুভাষ আখতার। ঘটনার পরপরই ওই ডাম্পার-চালকের সঙ্গীরা হোলপ্যাকে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। ফলে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখনকার মতো ঝামেলা মিটে যায়। |
এর পরে সোমবার সকালে ডাম্পারটিকে কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাকলিস্ট) করার দাবিতে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের (কেকেএসসি) নেতৃত্বে উৎপাদন বন্ধ করে দেন কর্মীরা। সংগঠনের সম্পাদক উত্তম মণ্ডলকে ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কর্মীরা। উত্তমবাবু এবং আর এক কর্মী রামবলীকে কাল্লা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। উত্তমবাবু তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর অনুগামী বলে পরিচিত।
পাণ্ডবেশ্বর থানায় উত্তমবাবু লিখিত অভিযোগে জানান, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খনি চালু করার জন্য কর্মীদের অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা করতে অস্বীকার করে জামুড়িয়া ২ নম্বর ব্লক কার্যকরী সভাপতি সিদ্ধার্থ রানার অনুগামী হিসেবে পরিচিত সজল ঘোষ, রাজীব ঘোষ, চন্দন পাল-সহ আট জন তাঁদের তিন জনকে মারধর করে। চারটি বোমা ফাটানো হয়। পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে।
অন্য দিকে, সিদ্ধার্থ রানা গোষ্ঠীর অনুগামী ‘হোলপ্যাকে’র চালক চন্দন পাল জানান, রবিবার ডাম্পারের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পরেই উত্তমবাবু কেকেএসসি’র কার্যালয়ে তাঁকে ডেকে মারধর করেন। তাঁর ক্ষোভ, নিজেদের সংগঠনের কার্যালয়ে এমন ভাবে মার খাওয়ায়, পরের দিন সকালে কর্মীরা উত্তমবাবুকে পদচ্যুত করার দাবিতে কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তাঁদের আরও দাবি ছিল, ডাম্পারটিকে ‘কালো তালিকা’ভুক্ত করতে হবে। অভিযোগ, এর পরই উত্তমবাবু বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে তাঁদের উপর চড়াও হয়। চন্দনবাবুর কথায়, “ওরাই বোমাবাজি করে আমাদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে ওদের সরতে হয়েছে। মারামারি হয়নি।” এই প্রসঙ্গে সিদ্ধার্থ রানার বক্তব্য, “বেআইনি ভাবে টাকা রোজগার করছেন উত্তমবাবুরা। একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় দলের কর্মীরাই তাঁকে সরিয়ে দিয়েছেন।”
পাণ্ডবেশ্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা কেকেএসসি-র নেতা নরেন চক্রবর্তী বলেন, “কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হবে।” তবে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ ও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, “ওই খোলা মুখ খনি থেকে তেল চুরি ও কয়লা পাচারের উপর নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ রয়েছে। কিছু দিন আগেও দুই গোষ্ঠীর মারামারির জেরে দুই গোষ্ঠীই পরস্পরের বিরুদ্ধে পাণ্ডবেশ্বর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল।”
|