লাভপুরের পরে নানুর। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যতই নিচুতলাকে কোন্দল ভুলে দলীয় সংহতি বজায় রাখার বার্তা দিন, নিজেদের মধ্যে হানাহানি চলছেই।
সাত দিনের মাথায় বীরভূমে ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হলেন এক দলীয় কর্মী। শনিবার নানুরের পোশলা গ্রামে তৃণমূল কর্মী আরমান শেখকে (২৮) গুলি করে খুন করা হয়। তার আগে ১৭ নভেম্বর লাভপুরের ব্রাহ্মণী গ্রামে খুন হন তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মণ্ডল।
গত মঙ্গলবার কলকাতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দলের সব গোষ্ঠীকে নিয়ে বৈঠক করেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সকলকে এক সঙ্গে চলার ‘কড়া বার্তা’ দেওয়া হয়। কিন্তু বীরভূমের জেলা নেতারা যে নিরস্ত হননি, এ দিন তারই সাক্ষী থাকল নানুর। স্থানীয় সূত্রের খবর, কীর্ণাহার ২ পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে থাকলেও স্থানীয় পোশলা গ্রাম সংসদ সভায় তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর সেই দখলদারি নিয়েই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মৃতের ভাই শেখ রেজাউল জানান, তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষের অনুগামী এক নেতার গোষ্ঠীকে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় হারিয়ে বুধবার তাঁরা গ্রাম সংসদ দখল করেন। তাঁর অভিযোগ, “শনিবার দুপুরে ওই নেতা দলবল নিয়ে গ্রামে হামলা করে। দাদা বাধা দিতে গেলে ওরা বোমা-গুলি চালায়। দাদার মাথায় গুলি লাগে।” বোলপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁর মৃত্যু হয়। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা রাতে বলেন, “ঘটনায় অভিযোগ হয়নি।”
লাভপুরের ব্রাহ্মণী গ্রামে খুন হওয়া চিত্তরঞ্জনবাবু তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী গোষ্ঠীর কর্মী বলে পরিচিত ছিলেন। আরমান শেখ আবার অনুব্রতবাবুর ঘনিষ্ঠ জেলা সম্পাদক সুব্রত ভট্টাচার্যের অনুগামী। তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষের অভিযোগ, “আরমানরা আসলে সিপিএমের লোক। লুটেপুটে খাওয়ার জন্য আমাদের দলে ঢুকেছিল।” শনিবারের ঘটনায় অভিযুক্ত নেতাকে নিজেদের কর্মী মেনে নিয়ে তাঁর পাল্টা দাবি, “তৃণমূল কর্মীদের গ্রাম-ছাড়া করতে আরমান দলবল নিয়ে আক্রমণ করেন। নিজেদের বোমা ফেটেই আরমান মারা গিয়েছেন।” উল্টো দিকে তৃণমূল জেলা সম্পাদক সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “গত দেড় বছর ধরে আরমান আমাদের দলে ছিলেন। তৃণমূলের নাম নিয়ে যারা দুর্নীতি করছে, তারাই আরমানকে খুন করেছে।” আবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, “দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই আমাদের দলের কর্মী আরমানকে খুন করেছে।” কেতুগ্রামের বিধায়ক তথা বীরভূমে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি শেখ সাহানওয়াজ অবশ্য স্বীকার করেছেন, “দলে কোনও কোনও কারণে মতবিরোধ রয়েছে ঠিকই। তবে এক্ষেত্রে কী হয়েছে জানি না।” সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, “আমাদের কেউই জড়িত নন। পুরোটাই তৃণমূলের নিজেদের গণ্ডগোল।” |