দলত্যাগের ধাক্কা যে মুর্শিদাবাদের কংগ্রেসের শক্ত ঘাটিতে ফাটল ধরাতে পারেনি শনিবার রেজিনগরের শক্তিপুরে বিশাল সমাবেশ করে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন অধীর চৌধুরীরা।
বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিয়েছেন রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রীও হয়েছেন। কিন্তু তাঁর দল ছাড়ায় কংগ্রেসের যে ক্ষতি হয়নি তা জানাতে গিয়ে ভিড়ে উপচে পড়া ওই সভায় অধীর বলেন, “কংগ্রেস ওই এলাকায় এত বড় জনসভা এর আগে কখনও করেনি। আসলে মানুষ সব সহ্য করতে পারে, কিন্তু হঠাৎ করে একটা দল ছেড়ে দিয়ে অন্য দলের কাছে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে কিছু দাও বলে হাত পাতা মেনে নিতে পারে না। তারই বহিঃপ্রকাশ এই বিপুল জনসমাবেশ।” হুমায়ুন দলত্যগের সময় বলেছিলেন, উপ-নির্বাচনে আর এস পি-র সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ও কংগ্রেসকে তিনি তিন নম্বরে ঢেলে ফেলবেন। এ দিন সমাবেশে ভিড় দেখিয়ে অধীর বলেন, “এখানে কংগ্রেস এক নম্বরে ছিল, এক নম্বরেই থাকবে।” |
কংগ্রেসের সভায় জনসমাগমকে অবশ্য গুরুত্ব দেননি হুমায়ুন। তাঁর বক্তব্য, “কান্দি, বড়ঞা, ডোমকল-সহ গোটা জেলা থেকে লোক এনে শক্তিপুরে সভা করেছে কংগ্রেস। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা রেজিনগর বিধানসভা এলাকার ভোটার নন। এ সব করে বাহাদুরি দেখিয়ে লাভ নেই। আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঘোল্লা হাইমাদ্রাসায় পরিচালন সমিতির নির্বাচন আছে। সেখানেই প্রমাণ করে দেব যে পরবর্তী সব নির্বাচনেই কংগ্রেস তিন নম্বরে থাকবে।”
বেলডাঙা ২ নম্বর ব্লক কংগ্রেসের ডাকা সভা বস্তুত রেজিনগর বিধানসভার আসন্ন উপ-নির্বাচনের উদ্বোধনী সভা হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় বেলডাঙা ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিলকিস তো বটেই, ওই সভায় দুই কংগ্রেস বিধায়ক আবু তাহের, সফিউজ্জামানও নাম না করে হুমায়ুনকে বিশ্বাসঘাতক বলে কটাক্ষ করেন। বিলকিস বলেন, “উনি মন্ত্রী নয় ষড়যন্ত্রী! পঞ্চায়েত সমিতি চালাতে গিয়ে পদে পদে বুঝেছি হাঙরের মতো তাঁর ক্ষুধা।” মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রেলের প্রতিমন্ত্রী অধীরও বলেন, “যার হাতে ক্ষমতা দিয়েছিলাম সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বিলকিসের কথা থেকে বুঝতে পারছি এত দিন আমার চোখে পটি বাঁধা ছিল। তাই তাকে বুঝতে পারিনি। হয়তো আমার কোনও ব্যবহারে ভুল হতে পারে। তাই বলে গোটা দলটা তো ভুল করেনি। সে চলে গিয়ে আমাকে শিক্ষা দিয়েছে।”
মন্ত্রী হওয়ায় রেজিনগর মোড়ে তাঁর সর্ম্বধনা সভা থেকে হুমায়ুন পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “আসন্ন উপ-নির্বাচনে ফের আমি জিতে দেখিয়ে দেব কে বেইমান আমি, না অধীর চৌধুরী!” কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে অধীরই বিশ্বাসঘাতকতা করছেন বলে অভিযোগ করেন। হুমায়ুনের বক্তব্যকে গুরত্ব না দিয়ে অধীর-ঘনিষ্ট বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী মন্তব্য করেন,“হাতি ঘোড়া গেল তল। মশা বলে কত জল!” |