বিনোদন উত্তর-পূর্ব ভারতের
বিনোদনে কোরীয় আগ্রাসন

নিঃশব্দ বিপ্লব বোধহয় একেই বলে। মিজোরাম-মণিপুর-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটা বড় অংশই মজে আছে বলিউড নয়, কোরিয়ার ফিল্মে। শাহরুখ, আমির, সলমন, অক্ষয়কুমাররা নন, দেশের এই অংশের কিশোর ও তরুণ সম্প্রদায়ের ‘হার্ট থ্রব’ এখন লি মিন হো, কিম হিউ জং, চা তায়ে হুং ও কাং সো-রা। নবম শ্রেণির ছাত্রী লিনা লালরিয়ানা, পনেরো বছরের পি রালতে বা আঠারো বছরের অ্যাটম বিজয়েন্দ্র খোলাখুলিই জানাচ্ছে, শাহরুখ খান মন্দ নয়, তবে রোম্যান্টিক নায়ক হিসাবে লি মিন হো অ-নে-ক ভাল। ‘কোলাভেরি ডি’ বা ‘নেনজুকুলে’ ভাল, তবে ‘ওপান গাংনাম স্টাইল’ হল গিয়ে ‘জাস্ট অ-সা-ম’। শুধু ‘টিন এজার’রা নয়, কোরিয়ার সিনেমা, নায়ক-নায়িকা, সঙ্গীতের প্রেমে কার্যত আচ্ছন্ন আবালবৃদ্ধবণিতা। গত পাঁচ বছরে, উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি রাজ্যগুলির বিনোদনের জগতে এ ভাবেই এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে কোরিয়া।
‘কোলাভেরি ডি’-র পরে ভারত জুড়ে ঝড় তুলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার পপ তারকা পার্ক জে সাং বা পিএসওয়াই-এর অ্যালবাম ‘ওপান গাংনাম স্টাইল’। এই গানের তালে পা মেলাচ্ছেন বাদশা খান, ক্যাটরিনা, এমনকী কেবিসি-র সেটে বসে খোদ বিগ বি-ও। কিন্তু এ সবের অনেক আগে থেকেই মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড পিএসওয়াই, লি মিন, জো জিং মো, হা জি ওয়েনদের চেনে। পিএসওয়াই ভুঁড়ি দুলিয়ে, গাংনাম নেচে মাত করে দিচ্ছেন। কোরিয়ার অ্যাকশন হিরো, রোম্যান্টিক হিরোরা অনায়াসে টক্কর দিচ্ছেন ড্যানিয়েল ক্রেগ, টম ক্রুজদের সঙ্গে। এমনকী, উত্তর-পূর্বে কোরিয়ান টিভি চ্যানেলও অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে জি, স্টার, সোনিকে।
মণিপুরে ২০০০ সাল থেকে জঙ্গি হুমকির জেরে হিন্দি সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ। মিজোরামে সিনেমা হলই নেই। এই সুযোগে বাজার মাত করছে কোরীয় সিনেমা ও টিভি সিরিয়াল। ২০০৬ সালে স্থানীয় একটি কেব্ল ‘গ্রিন রোজ’ নামে কোরিয়ার একটি সিরিয়াল মিজোরামে দেখায়। প্রথম দর্শনেই হিট। বর্তমানে ১৫টি কোরীয় সিরিয়াল দেখানো হয় মিজোরামে। কোরিয়ার ছবি-সিরিয়াল মিজো ভাষায় ডাব করে, ইংরেজি সাব-টাইটেল-সহ দেখানোর জন্য ১৫ জনের একটি সংস্থাও তৈরি হয়েছে। ওই কেব্ল সংস্থার মালিক লালসাউমালিয়ানা পাচাউয়া বলেন, “যে হেতু আমরা কেবল মিজো ভাষায় ডাব করি, তাই মিজোরামের সব উপজাতির মানুষ এখন মিজো ভাষা শিখছেন। কোরীয় ছবি কার্যত গোটা মিজোরামকে ঐক্যবদ্ধ করছে।”
ভারতের উত্তর-পূর্বে কোরিয়ার প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালানো আতোজিৎ ক্ষেত্রিমায়ুম মনে করেন, সাংস্কৃতিক ও আকৃতিগত সাদৃশ্যের কারণে কোরিয়ার ছবি মণিপুর, মিজোরামে বেশি জনপ্রিয়। ‘নিজের লোক’-এর অনুভূতিটা নিয়েই কোরিয়ার ছবি দেখতে বসেন উত্তর-পূর্বের মানুষ। মণিপুরের মতোই কোরিয়ায় পরিবারের নাম আগে বসে, পরিবারের সদস্যদের সম্বোধনটাও কাছাকাছি। কোরিয়ার ‘শামানিজ্ম’ ধর্মের সঙ্গে মণিপুরে প্রাক্-হিন্দু ‘শানামাহিজ্ম’এর বিস্তর মিল। মিল রয়েছে খেলা ও রূপকথাতেও। যে সব মিল ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে নেই।
আর তাই আইজলের স্কুলছাত্রী লিনা লালরিয়ানা ‘জব তক হ্যায় জান’-এর থেকে ‘ইউ কিস’, ‘মাই স্যাসি গার্ল’, ‘লাভ সো ডিভাইন’ নিয়ে বেশি উদ্বেল। শাহরুখ, সলমন, অক্ষয় নয়, মিজোরাম-মণিপুরের তরুণ-তরুণীরা কিম হিউ জং, লি মিন হো, চা তায়ে হুং, কাং সো রা-র আদব-কায়দা নকল করেন। সেলুন-পার্লারগুলিতে শুধুই কোরিয়ার হিরো-হিরোইনদের ছবি। চুল ছাঁটা থেকে পোশাকসবেতেই কোরিয়ার ছোঁয়া। এমনকী, সম্বোধনে ‘হ্যালো’-র স্থলে ‘সাইও’ বা ‘অ্যানেয়াংঘাসেও,’ ‘ধন্যবাদ’-এর বদলে ‘কামসাহামনিদা’, ‘আই লাভ ইউ’-এর বদলে শোনা যাচ্ছে ‘সারাংঘায়েও’। মায়ানমার হয়ে ঢোকা কোরীয় ছবির সিডি-ডিভিডি বাজার ছেয়ে ফেলেছে। মণিপুরের গৃহবধু মইসনাম নন্দদেবী বলেন, “এখানে প্রতিদিন হাজারো সমস্যা। যতক্ষণ ওদের সিনেমা, সিরিয়াল দেখি, এক অন্য পৃথিবীতে থাকি।” এমনকী নিজস্ব চলচ্চিত্র, টিভি শিল্পে সমৃদ্ধ অসমের ছাত্রছাত্রীদের মুখেও এখন কিম হিউ জং বা ‘প্লে-ফুল কিস’-এর চর্চা।
চিন খেয়েছে বাজার, কোরিয়া গ্রাস করেছে বিনোদন। ভারত বা তথাকথিত ‘মূল ভূখণ্ড’ থেকে যেন আরও দূরে সরছে উত্তর-পূর্ব।

অনুষ্ঠানে বিরতি
আগামী তিন বছর মঞ্চে গাইবে না বিখ্যাত গায়ক ক্রিস মার্টিনের রক-ব্যান্ড কোল্ডপ্লে। দলের প্রধান গায়ক ক্রিস নিজেই ব্রিসবেনের সঙ্গীতানুষ্ঠানে এ কথা ঘোষণা করেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.