কাঠগড়ায় তৃণমূলের সংগঠন
ধর্মঘটে পরিষেবা শিকেয়, অভিযোগ হাসপাতালের
র্মী নিয়োগ নিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত একটি শ্রমিক সংগঠনের যখন-তখন ধর্মঘটের জেরে পরিষেবা শিকেয় উঠতে বসেছে বলে অভিযোগ তুলল আসানসোলের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। মহকুমা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটকের সঙ্গে দেখা করেও উপযুক্ত ব্যবস্থার আবেদন করেছেন বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তৃণমূল নেতারা অবশ্য এমন অভিযোগ মানতে চাননি।
আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসককে লেখা চিঠিতে সেনর্যালে রোডের ওই বেসরকারি হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুনীল গুপ্ত অভিযোগ করেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল প্রভাবিত কিছু কর্মী নিয়ম বহির্ভূত ভাবে যখন-তখন ধর্মঘটের নামে স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকদের হাসপাতালে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন। ফলে পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটছে। রোগীর পরিজনদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অন্য কর্মীরাও। অতিরিক্ত জেলাশাসক জয়ন্তকুমার আয়কত এই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “সবিস্তার খোঁজখবর নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” চিঠির প্রতিলিপি মহকুমাশাসক শিল্পা গৌরীকে পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও তিনি বলেন, “চিঠি হাতে পাইনি। পেলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।”
হাসপাতালের এমডি সুনীলবাবু অভিযোগ করেন, গত রবিবার সকালে হঠাৎ ধর্মঘট শুরু করেন ওয়ার্ড বয়, সাফাইকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্ত্রী মলয়বাবুর সঙ্গে দেখা করেন। সুনীলবাবু বলেন, “মলয়বাবুর হস্তক্ষেপ ৫ ঘণ্টা পরে ধর্মঘট ওঠে। তিনি ধর্মঘটকারীদের ডেকে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।” তিনি অভিযোগ করেন, এখনও দাবি আদায়ের অছিলায় অফিসে ঢুকে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। অশান্তির ভয়ে হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এমন পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কিত হচ্ছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরাও। সুনীলবাবু বলেন, “গত তিন মাসে আমরা একাধিকবার এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। অন্তত চার বার বিনা নোটিসে ধর্মঘট ডেকে পরিষেবা বিঘ্নিত করা হয়েছে।” এমন চললে তাঁরা হাসপাতাল বন্ধের ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য হবেন বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
ধর্মঘটের কারণ প্রসঙ্গে সুনীলবাবুর দাবি, প্রথমে ওঁরা ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ না করা, মজুরি বাড়ানো-সহ বাড়তি কিছু সুবিধার দাবি তোলেন। আলোচনায় বসে তা যথাসাধ্য মেটানো হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে নির্মীয়মাণ কার্ডিয়াক বিভাগের জন্য এজেন্সি মারফত দু’জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেন কর্তৃপক্ষ। তা নিয়েই বিবাদ শুরু। আচমকা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূল প্রভাবিত সাফাইকর্মী, ওয়ার্ড বয় ও নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশ। কর্মী নিয়োগের আগে তাঁদের সংগঠনকে কেন জানানো হয়নি, সে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। পাশাপাশি, ওই দুই নিরাপত্তারক্ষীর পদে বসিয়ে তাঁদের পছন্দের লোক নেওয়ার দাবি জানায়। সুনীলবাবুর প্রশ্ন, “এটা কী করে সম্ভব? এ ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠন আমাকে নির্দেশ দেবে কেন?”
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘আসানসোল মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’ নামে একটি শ্রমিক সংগঠন সম্প্রতি গড়ে উঠেছে সেখানে। নেতৃত্বে রয়েছেন সংগঠনের সহ-সভাপতি মুনমুন মুখোপাধ্যায়। মুনমুনবাবু বলেন, “আমরা তৃণমূল অনুমোদিত সংগঠন। আমাদের সভাপতি স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ অনিমেষ দাস।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদ প্রসঙ্গে মুনমুনবাবু অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম মজুরি না দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করান।
মুনমুনবাবুর বক্তব্য, “আমাদের আন্দোলনের ফলে মজুরি বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত কাজ না করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।” তা সত্ত্বেও কেন তাঁরা যখন-তখন ধর্মঘট ডাকছেন বলে অভিযোগ উঠছে? মুনমুনবাবুর দাবি, “এ সব অভিযোগ মিথ্যা। তবে সম্প্রতি আমাদের না জানিয়ে কর্তৃপক্ষ দু’জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করেছেন। আমরা দাবি করেছি, আমাদের লোককেই নিয়োগ করতে হবে। আমাদের না জানিয়ে কর্মী নিয়োগ চলবে না। আমাদের ওয়ার্ডে হাসপাতাল, অথচ আমাদের লোক নেবে না, এটা হয় না কি?”
মন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় লোক নিয়োগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা না করে বাইরে থেকে লোক নিয়োগ করেছেন। তবে ওই হাসপাতালের পরিষেবা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তা দেখা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.