স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের চেম্বার ফাঁকা। ফার্মাসিস্টের টেবিল ঘিরে ছোট্ট জটলা গ্রামবাসীদের। অনেকেরই তর সইছে না। দাবি উঠছে, তাড়াতাড়ি দেখুন। ফার্মাসিস্ট খবরের কাগজে ট্যাবলেট মুড়তে মুড়তে বলছেন, “আমি একা মানুষ। ওষুধ দিতে হচ্ছে, আবার রোগীও দেখতে হচ্ছে। একটু ধৈর্য ধরুন, এখনই দেখে দিচ্ছি!”
বৃহস্পতিবার এই ছবিই দেখা গেল হুড়া ব্লকের খৈরি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে। তবে, বৃহস্পতিবার বলে নয়, চিকিৎসক না থাকায় অনেক দিন ধরেই রোগী দেখতে হচ্ছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্টকে!
এলাকারই বোরিয়াগোড়া গ্রাম থেকে কাকার সঙ্গে এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিল বছর বারোর যুধিষ্ঠির কৈবর্ত। দু’দিন ধরে জ্বর। কাকা নাথু কৈবর্ত ফার্মাসিস্টকে বললেন, “জ্বর, বমিভাবও রয়েছে।” ফার্মাসিস্ট ষ্টেথোস্কোপ দিয়ে ছেলেটিকে দেখে ওষুধ লিখে দিলেন। পাশে বসা স্বাস্থ্যকর্মী (জেলারেন ড্রেসিং অ্যাসিস্ট্যান্ট) ওষুধ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কখন কখন ওষুধ খাওয়াতে হবে। চাটানিগোড়া গ্রামের বাসিন্দা রামজিত সোরেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন কোমরে ফোঁড়ার ড্রেসিং করাতে। ব্যথা রয়েছে জেনে ওষুধ লিখে দিলেন ফার্মাসিস্ট। খৈরি গ্রামের বাসিন্দা তুলসীদাস লোহারের কথায়, “কয়েক দিন আগে আমার পেটের অসুখ হয়েছিল। এখানে তো চিকিৎসক নেই। তাই হুড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটতে হল।” |
আর নাথু কৈবর্ত বলছেন, “কী করব উপায় তো নেই। চিকিৎসক পেতে হলে সেই হুড়ায় যেতে হবে। এখান থেকে দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। আর না হলে লধুড়কা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানেও যদি চিকিৎসক না পাওয়া যায়। সেই আশঙ্কায় ভাইপোকে এখানেই দেখালাম।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, পুজোর আগে থেকেই এ ভাবে চিকিৎসক ছাড়া চলছে খৈরি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। রোগী দেখছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র ফার্মাসিস্ট শিশির মণ্ডল। আবার নিজের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। রেোগীদের ওষুধ দেওয়ার কাজে সহায়তা করছেন জিডিএ নেপাল সেন।
খৈরি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় পালের কথায়, “আমাদের বাড়ির বাচ্চা আচমকা সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়। এখানে চিকিৎসক নেই। তাই হুড়ায় নিয়ে যেতে হয়েছিল।” এলাকাবাসীর ক্ষোভ, “এ ভাবে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলতে পারে না। স্বাস্থ্য দফতরের অবিলম্বে এখানে একজন চিকিৎসক নিয়োগ করা দরকার।” স্থানীয় কলাবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বনাথ মাহাতো বলেন, “এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর কলাবনি ও লক্ষণপুর পঞ্চায়েতের একটা বড় অংশের মানুষ নির্ভর করেন। অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এতদিন হয়ে গেলে কোনও চিকিৎসক নেই। এ বার আমরা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলব।”
ফার্মাসিস্ট শিশির মণ্ডলের কথায়, “একমাত্র চিকিৎসক মলয় দাস ছুটিতে রয়েছেন। রোগী এলে দেখতেই হবে। সাধ্যমতো পরিষেবা দিচ্ছি। যাঁরা আসছেন তাঁদের তো আর ফিরিয়ে দিতে পারি না।” হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মল্লিকা মাহাতোর মতে, “কোনও চিকিৎসক ছুটি নিতেই পারেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব বিকল্প চিকিৎসক নিয়োগ করা। বিষয়টি আমি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলব।”
মলয়বাবু এবং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবশঙ্কর হাঁসদার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব যায়নি। পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপনকুমার ঝরিয়াত বলেন, “এই মূহূর্তে জেলায় চিকিৎসক প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। তাই সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। শীঘ্রই আমরা মেডিক্যাল অফিসার পাব। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে।” খৈরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন। ততদিন ভরসা ফার্মাসিস্টই! |