ট্রমা সেন্টারের কাজ থমকে শিলান্যাসেই
শিলান্যাসের পরে কেটে গিয়েছে ১৫ মাস। এখনও একটি ইটও গাঁথা হয়নি। কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে যে ট্রমা সেন্টার চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার কাজ শুরুই হয়নি। কবে শুরু হতে পারে, তারও কোনও জবাব নেই পুলিশকর্তাদের কাছেও। ফলে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের জীবনদায়ী চিকিৎসার যে আশ্বাস সরকারি তরফে মিলেছিল, আপাতত তা অনিশ্চিত।
২০১১ সালের অগস্ট মাসে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুরের কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে ‘ট্রমা কেয়ার সেন্টার’-এর সূচনার কথা ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পুর নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মেয়র শোভন চট্টেপাধ্যায় -সহ বিশিষ্টজনেরা। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী দুর্ঘটনাগ্রস্তদের চিকিৎসার জন্য ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সাহায্য পুরসভা দেবে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে খরচটা যাতে তাঁদের নাগালের মধ্যে থাকে, সেই দিকটিও ভেবে দেখা হবে। তাঁর আশ্বাস ছিল, টাকা এসে গিয়েছে। যন্ত্রপাতি কেনা শুরু হবে শীঘ্রই। পুলিশ হাসপাতালের বর্তমান সুপার কিংশুক বিশ্বাস বলেন, “ট্রমা কেয়ার সেন্টার এখানে শুরু হয়নি এখনও। শুরু করার কোনও নির্দেশও আসেনি। বিষয়টি এই মুহূর্তে দেখভাল করছেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার () সুধীর মিশ্র। তিনিই এই বিষয়ে বলতে পারবেন।” সুধীর মিশ্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) কিন্তু যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম আবার জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বলার এক্তিয়ার শুধু সুধীর মিশ্রেরই রয়েছে। আসল জবাবটা অধরাই থেকে গিয়েছে পারস্পরিক এই চাপান -উতোরে।
বাস্তবে, শিলান্যাস পর্বে যে ঘরগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেগুলি একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোনওটিতে হাসপাতালের আউটডোর চলছে। এখনও একটিও সরঞ্জাম আসেনি। সে দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় উঠে এসেছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষের প্রতি শহরবাসীর কিছু ক্ষেত্রে অমানবিক হয়ে ওঠার চিত্র। তিনি জানান, হাসপাতাল পুলিশের কাছে হেনস্থা হওয়ার আশঙ্কায় পথচারীরা এগিয়ে আসেন না দুর্ঘটনাগ্রস্তের সাহায্যে। এই ছবিটা মুছে দিতে সে দিনের অনুষ্ঠানপর্বে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, অনেক বেশি মানবিক হতে হবে পুলিশকর্মীদের হাসপাতালগুলিকে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনই সার। গত এক বছরে পরিস্থিতির কোনও হেরফের হয়নি বলেই মনে করছে চিকিৎসক মহল। অস্থি শল্য -বিশেষজ্ঞ রামেন্দু হোমচৌধুরীর মতে, “দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তির ঠিক ভাবে চিকিৎসা শুরুর প্রক্রিয়া দু’ধাপে হয়ে থাকে। প্রি -হস্পিটালাইজেশন আর পোস্ট -হস্পিটালাইজেশন। ২০০৯ সালে সরকারি সহায়তায় পুলিশের হাতে ১২টি অ্যাম্বুল্যান্স তুলে দিয়ে প্রি হস্পিটালাইজেশন চিকিৎসার সূচনা করে রাজ্য সরকার। এর জন্য ৭২ জন হোমগার্ডকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপের চিকিৎসা শুরু করতে হয় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে। সমস্যা সেখানেই। হাসপাতালগুলিতে রোগী দ্রুত আনা গেলেও আক্ষরিক অর্থে ট্রমা কেয়ার সেন্টার বলতে যা বোঝায়, তা নেই। ফলে দুর্ঘটনাগ্রস্তকে নিয়ে যিনিই পৌঁছন, রোগীর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায় না। এখানেই ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরির চেষ্টায় ব্যর্থতা।”
চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, “সম্প্রতি বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে রাস্তায় পড়ে ছিলেন এক জন অসুস্থ ব্যক্তি। তাঁকে ঘিরে ভিড় জমে ছিল। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাচ্ছিলেন না কেউ। প্রত্যেকেই পুলিশি ঝামেলা এড়াতে দায় সারছিলেন।” তাঁর দাবি, “শুধু ঘোষণা নয়। এর জন্য জোরদার প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে সরকার, পুলিশ হাসপাতালগুলিকে।”
যে পুলিশ হাসপাতালে এই ট্রমা সেন্টার হওয়ার কথা, সেটি গোড়ায় চালু হয়েছিল আমহার্স্ট স্ট্রিটে। ১৯২১ সালে আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে হাসপাতালটি সরে আসে ভবানীপুরে। এই মুহূর্তে সেখানে চিকিৎসকের ১৬টি পদ শূন্য। অনেক চিকিৎসক অবসর নিয়েছেন, অনেকে বদলিও হয়েছেন। কিন্তু সেই সমস্ত পদে নতুন করে নিয়োগ হননি কেউ। একই ভাবে অভাব রয়েছে নার্স, টেকনিশিয়ানের। ঘাটতি আছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও। হাসপাতাল সূত্রে খবর, চুক্তির ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই নিয়োগের একটিও ট্রমা সেন্টারের জন্য নয়। তা হলে ট্রমা সেন্টারের নিয়োগ কবে শুরু হবে? সে ব্যাপারে কারও কাছে কোনও উত্তর নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.