গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন চলাকালীন যে সমস্ত মামলা (খুনের অভিযোগ ছাড়া) হয়েছে তা নিঃশর্তে প্রত্যাহারের দাবি রাজ্য সরকারকে ফের জানিয়ে দিল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) প্রতিনিধি দল। বুধবার মহকারণে প্রতিনিধি দলের তরফে রোশন গিরি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে ওই আর্জি জানান। পাশাপাশি, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের হাত থেকে সমস্ত দফতর জিটিএতে হস্তান্তরের দাবিও জানানো হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার বিকালে মহাকরণে জিটিএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হবে।
রোশন গিরি বলেন, “জিটিএ চুক্তিতে মামলা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল। জিটিএ গঠনের পর তিনমাস কেটে গেলেও তা হচ্ছে না। তার উপরে দফতর হস্তান্তর প্রক্রিয়ার পুরো হয়নি। এদিন বৈঠকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা সব বলব।” এর সঙ্গে আগামী ২৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রসচিব দার্জিলিঙে আসবেন বলেও রোশন গিরি জানান। তিনি জানান, দ্রুত এই সমস্ত প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করার জন্য রাজ্যকে বলা হয়েছে। এদিনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের অনুদান মিলিয়ে প্রায় ৯৩ কোটি টাকা দ্রুত জিটিএকে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।
রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা আদায়ের পাশাপাশি নিজেরাই রাজস্ব আদায়ে জোর দিয়েছে জিটিএ কর্তৃপক্ষ। এবার পাহাড়ের বিভিন্ন ছোট, মাঝারি এবং বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের থেকে রাজস্ব আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মঙ্গলবার জিটিএ-র রিনিউয়াল সোর্সেস অব এনার্জি বিভাগের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জিটিএ সদস্য নরবু জি লামা বলেন, “জিটিএ চুক্তিতেই ওই রাজস্ব আদায়ের কথা রয়েছে। ১২ শতাংশ হারে আমরা বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারব। জিটিএ এলাকায় যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির কাজ হচ্ছে তা সব মিলিয়ে ধরলে আমাদের বছরে ১০০ কোটি টাকা আয় হতে পারে। তা দিয়ে জিটিএ এলাকার উন্নয়নের কাজ হবে।” জিটিএ সূত্রের খবর, রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি নিয়ে জিটিএ কর্তৃপক্ষ ২৬ নভেম্বর ন্যাশনাল হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশনের (এনএইচপিসি) জলবিদ্যুৎ প্রকল্প কালীঝোরা-স্টেজ ৪ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। ২৯ নভেম্বর বিন্দু এবং জলঢাকা’র প্রকল্প আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। তার পরে পরপর জিটিএ এলাকার সমস্ত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এবং আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন আধিকারিকেরা। এই প্রকল্পগুলি ছাড়া জিটিএ এলাকায় রাম্মাম, নেওরা, নিপ্পন, চেল এবং জলঢাকা এলাকায় আরও কয়েকটি ছোট এবং মাঝারি মাপের প্রকল্প রয়েছে।
জিটিএ-র নরবু জি লামা জানান, কালীঝোরার প্রকল্প শেষ হলে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বাকি সমস্ত ছোট, মাঝারি ও বড় প্রকল্প ধরলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে চলেছে ৩৭৫ মেগাওয়াট। একমাত্র এনএইচপিসি’র স্টেজ-৩ এবং স্টেজ-৪ থেকে থেকেই বছরে ৫০ কোটি রাজস্ব আদায়ের কথা। বাকিগুলি ধরলে তা ১০০ কোটির মতো হবে। পাশাপাশি, পাহাড়ে নিজস্ব জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির চিন্তাভাবনা চলছে বলেও তিনি জানান। তাঁর কথায়, “আমরা পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে প্রকল্পের কাজ করব ঠিক করেছি। এলাকা, প্রস্তাব, প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এতে জিটিএর আয় বাড়বে।” বৈঠকে পাহাড়ের সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুতের প্রসারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। |