নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
শিশু সুরক্ষার কাজকর্মের উপরে নজরদারি করতে সরকারি তরফে কমিটি তৈরি নিয়ে গড়িমসি চলছেই। সরকারি পর্যায়ে নির্দেশ জারির পরে প্রায় ৩ বছর কেটে গেলেও জলপাইগুড়ি জেলায় ওই কমিটি গড়া হয়নি। তাই জেলার বিভিন্ন ব্লকে শিশু সুরক্ষার কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি উদ্বিগ্ন হয়ে নিজেরাই একটি কমিটি গঠন করল। বুধবার জলপাইগুড়ির সুভাষ ভবনে ১৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠক করে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর চাইল্ড প্রোটেকশন’ গড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। কমিটির তরফে সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এই কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী এক বছর বাল্যবিবাহকে রোধের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জেলার স্কুলগুলিতে প্রচার চালাব। বাবা মায়েদেরও সচেতন করা হবে।” পাশাপাশি, কমিটির আরেক মুখপাত্র শৌভিক বসু জানান, সরকারি পর্যায়ে জেলা ভিত্তিক যে কমিটির ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তাই তাঁরা নিজেদের মতো রূপরেখা তৈরি করেছেন বলে তিনি জানান। তাঁর কথায়, “প্রশাসন চাইলে আমরা সবরকম সহযোগিতা করব। আশা করব প্রশাসনও আমাদের সঙ্গে থাকবে।”
২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সুসংহত শিশু সুরক্ষা প্রকল্প তথা আইসিপিএস নামে প্রকল্পটি তৈরি করে। এই প্রকল্পে প্রতি রাজ্যে একটি কমিটি এবং জেলায় পৃথক ভাবে সুসংহত শিশু সুরক্ষা কমিটি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি নজরদারি জোরদার করার লক্ষ্যেই আইসিপিএস গঠনের নির্দেস বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। আইসিপিএসের লক্ষ্য, পাচার হয়ে যাওয়া শিশু, শিশু শ্রমিক, পথশিশু অথবা অন্যভাবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের মুল স্রোতে ফেরানো। সেই সঙ্গে উদ্ধার হওয়া শিশুদের দত্তক দেওয়ার ব্যবস্থা করা ও শিশুদের অধিকার খর্ব হয় এমন প্রবণতা থেকে তাদের রক্ষা করা। শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে তথ্যভান্ডার তৈরিও আইসিপিএসের অন্যতম উদ্দেশ্য। জেলা স্তরের কমিটিতে জেলাশাসককে প্রধান করে কমিটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক এই কমিটির মূল তদারকি করেন। কমিটিতে বিভিন্ন স্তরে সরকারি কর্মী ছাড়াও জেলা জুড়ে সমীক্ষা সহ অনান্য কাজ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সম্পদকর্মী, সমাজকর্মীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, জলপাইগুড়িতে ওই আইসিপিএস পুরোপুরি তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক দেবদাস বিশ্বাস বলেন, “জেলায় পুরো কমিটি এখনও তৈরি হয়নি। সম্প্রতি এই কমিটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সমাজকর্মী, সংস্থাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই এই কমিটি তৈরি হবে।”
কমিটির যে কাজ করার কথা তা অবশ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি আলাদা ভাবে জেলা জুড়ে করে চলেছে। কিন্তু, ওই কাজে সমন্বয় না-থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে বলে সংস্থাগুলি জানিয়েছে। সে জন্যই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে একেকটি সংস্থা এলাকা ভিত্তিক ওই কাজে জোর দেবে বলে কমিটি জানিয়েছে। ঠিক হয়েছে, প্রতিটি ব্লকের থেকে বাছাই করা স্কুলে তথ্যচিত্র দেখিয়ে, পুতুল শো করে বাল্যবিবাহ নিয়ে প্রচার চালানো হবে। কোনও বান্ধবীর বিয়ের খবর শুনলেও যাতে ছাত্রীরা এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে তার ব্যবস্থাও করবে ফোরাম। জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যা দীপশ্রী রায় বলেন, “আইসিপিএস কমিটি তৈরি হয়নি বলেই যে কাজ থমকে থাকবে তা নয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিরও কিছু দায়ভার রয়েছে। তাই নিজেরাই এদিন বৈঠক করে ব্লক থেকে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” |