ক্ষুব্ধ বাস-ট্যাক্সি-অটো সংগঠন |
ধর্মঘটে যাব না, মুচলেকা দিলে তবেই নয়া পারমিট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রথম থেকেই বন্ধ-ধর্মঘটের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বার তাদের ঘোষণা, ধর্মঘট বা বন্ধে সামিল হবে না এই শর্ত মেনে মুচলেকা দিলে তবেই বাস, ট্যাক্সি ও অটোরিকশার পারমিট দেওয়া হবে। পরিবহণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হওয়ার পরে বুধবার মহাকরণে এ কথা জানান মদন মিত্র। তাঁর দাবি, এই শর্ত মেনে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২০০টি নতুন বাস পথে নেমেছে।
পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের তরফে অবশ্য মন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার সমালোচনা করা হয়েছে। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের সাধারণ সম্পাদক সাধন দাস বলেন, “প্রতিবাদের অধিকার সকলেরই আছে। এ ভাবে তা কেড়ে নেওয়া যায় না।” আর ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মজুমদারের বক্তব্য, পরিবহণমন্ত্রীর এই ঘোষণা স্বৈরতন্ত্রের নামান্তর। তিনি বলেন, “শর্তসাপেক্ষে পারমিট দেওয়া যায় না।” বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “মুচলেকা দিয়ে পারমিট দেওয়ার বিষয়টি হাস্যকর, অসাংবিধানিক এবং অবাস্তব। এটা রূপায়ণ করা যাবে না।” শর্ত মেনে মুচলেকা দিয়ে পারমিট নেওয়া শুরু হয়েছে বলে মন্ত্রী যে-দাবি করেছেন, তার সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতা অটো অপারেটর্স ইউনিয়নের নেতারা। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাবুন ঘোষ বলেন, “পরিবহণমন্ত্রীর এই ধরনের ঘোষণা শুধু অন্যায়ই নয়, পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষে অপমানজনকও বটে।”
শর্তাধীন পারমিটের বন্দোবস্ত ছাড়াও গণ-পরিবহণ স্বাভাবিক রাখতে সরকার আরও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। পরিবহণমন্ত্রী জানান, পারমিট পাওয়ার পরেও যাঁরা দীর্ঘদিন পথে বাস নামাননি, তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন তাঁরা বাস নামাননি, আগামী তিন দিনের মধ্যে সরকারকে তা জানাতে হবে। বিভিন্ন আরটিও বা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে পারমিটের যে-সব আবেদন পড়ে আছে, সেগুলির ব্যাপারেও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের সঙ্গেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি নতুন পারমিট দেওয়ার আগে মহাকরণে পরিবহণ সচিবের কাছ থেকে তা অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলির ন’টি আরটিও-র প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স নবীকরণ-সহ পরিবহণ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। এই কাজের রিপোর্ট প্রতি সপ্তাহে পাঠাতে হবে মহাকরণে।”
কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও কলকাতার মধ্যে ‘কন্ট্রাক্ট ক্যারেজ’-এর বাসের জন্য নতুন করে পারমিট দেওয়া হবে বলে জানান মদনবাবু। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কন্ট্রাক্ট ক্যারেজের বাসগুলি আজ, বৃহস্পতিবারের ধর্মঘটের ডাক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ কন্ট্রাক্ট ক্যারেজ মালিক ও অপারেটর সংগঠনের সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তাঁদের দাবি মিটে গিয়েছে। তাই তাঁরা প্রস্তাবিত ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
অক্টোবরের বেতন না-পাওয়ায় পরিবহণ নিগমের এক কর্মী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এ দিন সেই প্রসঙ্গ উঠলে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “এটা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তবে এটাও ঠিক যে, এক মাসের বেতন না-পেলেই আত্মহত্যা করার মতো পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয়। পুজোর ছুটি থাকায় পরিবহণ নিগমগুলিতে অক্টোবরের বেতন হয়নি। মঙ্গলবার বেতনের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।” মন্ত্রী জানান, ছ’মাসের পাইলট প্রকল্পের কথা বলা হয়েছিল। তার পরেও সরকার নিগমগুলির কর্মীদের বেতন, পেনশন, গ্র্যাচুইটি দিয়ে
যাচ্ছে। তিনি বলেন, “সিপিএম প্রচার করছে, নিগমগুলির কর্মীদের বেতন হচ্ছে না। কর্মীরা ওই বিভ্রান্তিকর প্রচারে কান দেবেন না। সিপিএম-কেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, তারা যেন এই ধরনের প্রচার বন্ধ করে।” |