গতি আসছে না কাজে, নিজের দফতর নিয়েই ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে দফতরটি নিজের হাতেই রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দায়িত্ব নেওয়ার পরে হাসপাতালগুলিতে হঠাৎ পরিদর্শন শুরু করেছিলেন। পরপর প্রকল্প ঘোষণা করে গিয়েছেন। কাজে গতি আনতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী করেছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। কিন্তু তাতেও স্বাস্থ্য দফতরের কাজে যে তেমন গতি আসেনি, বুধবার তা মন্ত্রী-আমলাদের সামনেই কার্যত স্বীকার করে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু স্বাস্থ্যই নয়, স্বরাষ্ট্র, সংখ্যালঘু বিষয়ক, শিক্ষা, পর্যটন, কৃষি বিপণন নিজের সরকারের এই সব দফতর নিয়ে দফায় দফায় অসন্তোষ ঝরে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এ দিন সংখ্যালঘু দফতরে মন্ত্রী নিয়োগ করার আগে পর্যন্ত দফতরটি নিজের হাতেই রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরভূমের লোবা এবং নদিয়ার তেহট্টে পুলিশের ভূমিকায় যে তিনি খুশি নন, তা-ও এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, “পুলিশের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।” ঘটনাচক্রে, স্বরাষ্ট্র দফতর মুখ্যমন্ত্রীরই হাতে।
বিভিন্ন দফতরের কাজকর্ম পর্যালোচনা করতে গিয়ে সব ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর উপলব্ধি মোটামুটি এক “যা হওয়া উচিত ছিল তার অনেক কিছুই হয়নি।” স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “অনেক নতুন হাসপাতাল হওয়ার কথা ছিল। অনেক হাসপাতালে নতুন পরিষেবার কথা ঘোষণা হয়েছিল। তার অনেক কিছুই হয়নি। প্রকল্পগুলি না হলে পরিষেবার উন্নতিও হবে না। দ্রুত যাতে শেষ হয় দেখে নিন।” এ দিনই মন্ত্রিসভায় চন্দ্রিমাকে আইন-বিচার দফতরের অতিরিক্ত স্বাধীন দায়িত্বও দিয়েছেন মমতা। ফলে, স্বাস্থ্য দফতরে চন্দ্রিমা আগের মতো নজরদারি করতে পারবেন কি না, উঠেছে সেই প্রশ্ন। |
ইমাম ভাতা, হজ কমিটির নতুন বাড়ি এবং নতুন নতুন মাদ্রাসা তৈরি নিয়ে তাঁর ঘোষণা বাস্তবায়িত না হওয়া নিয়ে এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “টাকাপয়সার তো অভাব নেই। তা হলে কাজ হচ্ছে না। অর্থসঙ্কটের মধ্যেও সংখ্যালঘু দফতরে যথেষ্ট টাকা পয়সা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হজ কমিটির নতুন বাড়ি হয়নি। ইমাম ভাতা আটকে আছে।”
উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, যে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা ছিল, সেগুলির কাজ কেন থমকে রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, সর্বশিক্ষা মিশনের কাজে গতি না আসা নিয়েও প্রশ্নও তোলেন তিনি। কারিগরি শিক্ষার পৃথক মন্ত্রী থাকলেও, ব্রাত্যর কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, “এত আইটিআই তৈরির কথা ছিল। কতগুলি এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়েছে?”
এর পর পর্যটন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “দার্জিলিঙে আমি গিয়ে কিছু কাজ করে এসেছি। এ ছাড়া পর্যটনে আর কিছুই হয়নি।” মমতা জানিয়ে দেন, ওই দফতরের কাজে গতি আনতে তিনি মন্ত্রী বদল করেছেন। এ দিন নতুন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সকলের সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কৃষি বিপণন দফতরে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ছিল কিষাণ মান্ডি। কিন্তু সেই কাজ আশানুরূপ ভাবে না হওয়ায় হতাশা চেপে রাখতে পারেননি তিনি।
লাল ফিতের ফাঁস থেকে প্রশাসনকে মুক্ত করার ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “এক দফতর থেকে অন্য দফতরে জমি হস্তান্তর হতে এত সময় লাগছে কেন? দুটোই তো সরকারি দফতর। লাল ফিতের ফাঁসে যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।” পরিবহণ দফতর নিয়ে তাঁর অনেক কিছু বলার থাকলেও তা তিনি পরে বলবেন বলে মন্তব্য করেন মমতা। এ দিনই যদিও মদন মিত্রকে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রীতে উন্নীত করেছেন মমতা।
তবে পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজ এবং গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির কাজের প্রশংসা করেন মমতা। খাদ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেরও প্রশংসা করেন। তবে ধান সংগ্রহের কাজ যাতে ব্যাহত না হয় তা খাদ্যমন্ত্রীকে দেখতে বলেছেন। এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, “দুর্নীতি রুখতে অ্যান্টি-কোরাপশন ব্যুরো খুলেছি। তারা সরকারের বিভিন্ন দফতরের দুর্নীতির তদন্ত করবে। খারাপ এবং ভালোর মধ্যে ফারাক থাকা দরকার।” |