দেবী জগদ্ধাত্রীর কাছে কৃষ্ণনাগরিকদের প্রত্যাশা অনেক। বছরভর অপেক্ষার পর পুজোর দু’দিন যেন সবটুকু দিয়ে মেতে ওঠেন তাঁরা। কিন্তু উৎসব শেষে ভারাক্রান্ত হয়ে যায় মন। এত কিছুর মধ্যেও কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি কাজ করে। কেবলই যেন মনে হয়, আরও একটু বেশি হলে ভাল হত। মনে হয় এটা নয়, ওটা কেন হল না? মনের কোণে যেন একটা আক্ষেপ রয়ে যায়। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী সংহিতা সান্যাল যেমন বলেন, “বাইরে থেকে আসা অগনিত দর্শণার্থীর রাত্রি যাপনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কোথায়? পুলিশ প্রশাসনের রক্তচক্ষু থাকে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে সব কিছুর মধ্যে একটা শৃঙ্খলার অভাব দেখা যায়।” |
আবার, কৃষ্ণনগর হাই স্কুলের শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “কয়েক বছরে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর জৌলুস অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় তেমন প্রচার পাচ্ছে না। প্রচারের সবটুকু আলো যেন চন্দননগর টেনে নিচ্ছে। পুজোর সময় রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপ্রকৃতিস্থ মদ্যপ যুবকদের ভিড় বেড়ে যায়। পাশাপাশি রাস্তার দু’পাশে আলোর পোস্ট তৈরি হওয়ায় রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। তাতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।” এ সবের পাশাপাশি পুজো কমিটির কাছে উৎপলবাবুর আবেদন, “প্রতিটি পুজোরই বাজেট ক্রমশ বাড়ছে। কারও কারও নাকি দশ থেকে বারো লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে! এই বিরাট পরিমাণ অর্থের যদি অতি সামান্য অংশও তাঁরা এলাকার দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ব্যয় করতেন তা হলে ভাল হত।” আবার নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির সভাপতি অর্চনা ঘোষ সরকার বলেন, “আমি চাই এমন একদিন আসুক যে দিন এত পুলিশের প্রয়োজন হবে না। কোনও রকম উৎকণ্ঠা না নিয়েই নিশ্চিন্তে পরিবারের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দেখে বেড়াতে পারব। আমি চাই, সকলেই উৎসবের দিনগুলোতে নিজেরা সংযত থাকুক।” তিনি আরও বলেন, “যদিও প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে উদ্দাম নৃত্য হয় তা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু আর কুরুচিপূর্ণ। এটা বন্ধ হলে পুজো আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন হবে” আবার আরও বেশি শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে উৎসবের আয়োজনের কথা বলেছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী সুবীর পাল। তিনি বলেন, “কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে থিম নিয়ে বেশি করে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। এখনও পর্যন্ত ঘূর্ণীর বাইরে থিমের পুজোর বিশেষ প্রচলন হয়নি। বিশৃঙ্খল ভাবে ঘাড়ে করে দৌড়ে প্রতিমা বিসর্জনের পরিবর্তে সুদৃশ্য ও সুসজ্জিত শোভাযাত্রা করলে পুজোর আকর্ষণ আরও বাড়বে।” তবে এত কিছুর মধ্যে পুজোর উদ্যোক্তাদের চাহিদা আবার একেবারেই ভিন্ন। একটি পুজো কমিটির সম্পাদক সুজা সিংহরায় বলেন, “পুজোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রয়োজন অর্থের। মূল্যবৃদ্ধির কারণে দিন দিন বাজেট বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সাধারণ মানুষের উপর চাপও দেওয়া যাচ্ছে না।” তিনি বলেন, “চন্দননগরের মতো কৃষ্ণনগরের পুজোতেও বিজ্ঞাপনদাতারা উৎসাহ দেখালে পুজোয় জৌলুস বাড়বে।” |