কাসভের ফাঁসি স্বস্তিতে বদুয়া
দাদা কিন্তু কথা রেখেছিল, তবুও...
জমল আমির কাসভের ফাঁসি দেওয়ার খবর বুধবার সকালে টিভির পর্দায় ভেসে উঠতেই একটা চোরা শিহরণ। ঠিক দেখছি তো! তারপর ঠোঁট কামড়ে গুমরে কেঁদে উঠেছিলেন আজিরুন্নেসা বিবি।
বাড়ির সকলে হুড়মুড়িয়ে ছুটে এসেছিলেন। “কী হয়েছে রে?” কাঁধে হাত রেখেছিলেন মা। কথা বলতে পারেননি আজিরুন্নেসা। শুধু মুখে ওড়না চেপে টিভিটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর এক ছুটে বিছানায় পরে চার বছর আগের হারিয়ে যাওয়া দাদার ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতি। আজিরুন্নেসা বলতে থাকেন, “সারাটা দিন আজ যেন দাদার সঙ্গে ফের কথা হল জানেন! বার বার বলছিলাম, দাদা দেখলি আল্লা আমাদের কথা শুনলেন।” খবরটা ছড়িয়ে পড়তে গ্রামেও কী একটু খুশির হাওয়া বইল, হয়তো বা। চার বছর আগে কাসভের গুলিতে মুম্বই ভিটি স্টেশনের কাছে রাতের খাবার কিনতে বেরিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া আসফার শেখের সেই সব গ্রামীণ বন্ধুরাও সাইকেলে জড়ো হয়েছিলেন বাড়িতে। মুখে কথা নেই, হারানো বন্ধুর স্মৃতিতে তাঁরাও কী কিঞ্চিৎ খুশি নন, হয়তো বা।
সে রাতে বোনকে ফোন করেছিলেন আসফার, “দেখিস তোর বিয়েতে কী নিয়ে যাব!” দাদা আসেনি। বোনের বিয়েও হয়ে গিয়েছে। তবে ধ্বস্ত পরিবারটাকে দাঁড় করাতেই যে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন আসফার, তা তো সবাই জানে। আর আসফারের সেই বোন আজিরুন্নেসা বিবি বলেন, “আজ সত্যিই খুশির দিন। দাদা যেখানেই থাকুক শান্তি পাবে।” আসফারের বাবা পেশায় দিনমজুর। আল্লারাখা শেখ বলেন, “দেশের এতগুলো লোককে যে গুলি চালিয়ে খুন করে, তাকে এত দিন ধরে বাঁচিয়ে রাখাই উচিৎ হয়নি। আরও আগে ওর ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল।”
মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির বড়ঞা থানার কুলি এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বদুয়া। ওই গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে আসফার। ছয় ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতেই ছোট্ট একটা সংস্থায় কাজ নিয়ে মুম্বই পানি দিয়েছিল সে। আল্লারাখা বলেন, “সংসারের হাল ফেরাতেই তো ছেলেটা গিয়েছিল। ভিটি স্টেশন চত্বরেই থাকত। সারা দিন কাজ করে সন্ধ্যার পরে মুম্বাইয়ের ভিটি স্টেশনে এসে রাত কাটাত। বড় কষ্ট করেছে। আর কী পেরত পেল!” গলা ধরে আসে বাবার। অভাবের সংসারে ছোট দুই ভাই বোনের পড়াশোনা থমকে গিয়েছিল। অতগুলো মাথার অন্ন সংস্থানই দায় হয়ে উঠছিল। তবে যাওয়ার আগে গ্রামের সকলেই আস্বস্ত কর গেিয়েছিল আসফার, “অবস্থা ফিরিয়ে দেবই, দেখিস।”
বাস্তবিকই অবস্থা ফিরছিল তার পরিবারে। ভাল পাত্র দেখে বোনের বিয়েটাও ঠিক হয়েছিল। মুম্বই কাণ্ডের কিছু দিন আগে বাড়িও এসেছিল। ফিরে যাওয়ার ২১ দিনের মধ্যে ভিটি স্টেশনে জঙ্গিদের গুলি। মনে করিয়ে দিলেন আজিরুন্নেসা বিবি।
এদিন সকালে জঙ্গি কাসভের ফাঁসির খবরে বদুয়া গ্রামের মানুষও খুশি। তাঁদের কথায়, এত দিনে আমাদের আসফারের আত্মার শান্তি হবে। স্থানীয় যুবক সামারুল মল্লিক বলেন, “আসফার খুব ভাল ছেলে ছিল। জঙ্গির গুলিতে মৃত্যু হওয়ায় গোটা বদুয়া চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। আজও কাঁদছি। আনন্দে।” লালবানু বেওয়া, রানি বিবিরাও বলছেন, “আসফার আমাদের সকলের ঘরের ছেলে ছিল। তাই আজকের খুশির দিনেও চোখের জল ধরে রাখতে পারছি না।”
যে বোনের বিয়ের জন্য অর্থ রোজগার করতে ভিন রাজ্যে যায় আসফার, সেই বোনের বিয়ে হয়েছে। আসফার সেখের মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকাও পেয়েছ তাঁর পরিবার। আসফারের এক ভাই আসমার রেলে চাকরি পেয়েছেন। বাড়ির দাওয়ায় বসে চোখের জল ধরে রেখে বোন আজিরুন্নেসা বিবি বলেন, “এখন সংসারে সুখ এসেছে। দাদা কথা রেখেছে। কিন্তু ...।” কেঁদে ফেলেন আজিরুন্নেসা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.