চার বছর আগের ২৬ নভেম্বর। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি রেল স্টেশন, তাজমহল হোটেল, লিওপোল্ড কাফে, কামা হাসপাতালে আজমল কসাবদের তাণ্ডবলীলা চলাকালীন বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিলেন ওঁরা সাত ফুটবলার। বুধবার কসাবের ফাঁসির খবর শোনার পর তাঁদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, “ঠিক হয়েছে। ফাঁসি হওয়ারই কথা।”
কী হয়েছিল সে দিন? আই লিগে মুম্বই এফসি-জেসিটি ম্যাচ ছিল কুপারেজ স্টেডিয়ামে। কোলাবার সেই অভিশপ্ত লিওপোল্ড কাফের কাছেই হোটেলে উঠেছিলেন জেসিটির বলজিৎরা। ম্যাচ হারার পর খারাপ মন ভাল করতে কোচ সুখবিন্দর সিংহের অনুমতি নিয়ে কোলাবার রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিলেন সাত ফুটবলার। ডিনার সেরে হোটেলে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু লিওপোল্ড কাফের কাছে এক রেস্তোরাঁয় যখন খাওয়াদাওয়া সারছেন, তখনই ঢিল ছোড়া দূরত্বে শুরু হয়ে যায় কসাবদের গুলিবৃষ্টি।
সে দিনের বলজিৎ আজ ইস্টবেঙ্গলে। বলছিলেন, “সে দিন করণজিৎ আর আমি যে কী ভাবে বেঁচে ফিরেছিলাম তা আজও ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। কোচ সুখিজি আর পারমিন্দরজি একটু দেরি করেছিলেন। না হলে ওরা গুলির মধ্যেই পড়তেন। আমরা লিওপোল্ড কাফেতেই প্রথমে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভিড় বলে করণজিৎ অন্য রেস্তোরাঁয় যাওয়ার কথা বলে। আমাদের বাকি বন্ধুরা তখন রাস্তায়। পাশের রেস্তোরাঁয় গিয়ে সবে খাবারের অর্ডার দিয়েছি, হঠাৎ বাইরে গুলির শব্দ। কেউ এক জন বলল, জঙ্গি হামলা হয়েছে। ভাগো।”
বলজিতের সে দিনের সঙ্গী করণজিৎ এখন সালগাওকরে। বলছিলেন, “বাইরে বেরিয়ে দেখি লিওপোল্ড থেকে মানুষ পড়িমড়ি করে বেরিয়ে আসছে। আমাদের বন্ধুদের কথা মনে পড়ল। কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে হবে। তাই দৌড়লাম। সামনে একটা দোকানের শাটার ফেলার ফাঁকে সেখানে ঢুকে পড়ায় বেঁচে গিয়েছিলাম।” করণজিৎদের তৎকালীন কোচ সুখবিন্দর এ দিন লুধিয়ানার বাড়িতে বসে আনন্দবাজারের কাছেই প্রথম শুনলেন কসাবের ফাঁসির কথা। “সঠিক বিচার। আমি আর পারমিন্দর সে দিন একটু দেরিতে খেতে বেরিয়েছিলাম। রাস্তায় পুলিশ আটকে দেয়। না হলে আমরা গুলিবিদ্ধ হতেও পারতাম। ছেলেদের জন্য চিন্তা হচ্ছিল। বেশি রাতে ওরা সবাই যখন হোটেলে ফিরল তখন ওপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম সকলে অক্ষত থাকায়। ততক্ষণে বাড়ি থেকে একের পর এক ফোন আসছে। এ রকম দুঃসহ রাত ভারতের বুকে যেন আর না আসে।” |