প্রথম টেস্ট সবে শেষ হয়েছে। আর দ্বিতীয় টেস্ট প্রায় এসে পড়ল। দু’টো টেস্টের মাঝে কম সময়ের ব্যবধান মানে প্লেয়ারদের শারীরিক আর মানসিক দু’দিক দিয়েই খুব তাড়াতাড়ি চাঙ্গা হয়ে ওঠার জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। আমি মনে করি, এই জায়গাটায় ইংল্যান্ডের তুলনায় ভারত ভাল অবস্থায় থাকবে, কারণ সিরিজে আমরা ১-০ এগিয়ে আছি। ইংল্যান্ড প্রচণ্ড চাপে অনুভব করবে নিজেদের। বিশেষ করে আমদাবাদে আবার এক বার ওদের ব্যাটসম্যানদের স্পিনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা প্রকট হয়ে যাওয়ায়। মানছি, মোতেরায় ইংল্যান্ড টেস্টটাকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছে। প্রথম ইনিংসে নিজেরা ৩৩০ রানে পিছিয়ে পড়া সত্ত্বেও ভারতকে বাধ্য করেছে ম্যাচ জিততে দ্বিতীয় বার ব্যাট হাতে নামতে। কিন্তু সঙ্গে এটাও মনে রাখা উচিত যে, অ্যালিস্টার কুক আর ম্যাট প্রায়র ছাড়া আর এক জনও ইংরেজ ব্যাটসম্যান টার্নিং বলকে কর্তৃত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি প্রথম টেস্টে। আমদাবাদে টেস্ট যত গড়াবে, ততই পিচ স্লো হয়ে উঠবে সেটা জানাই ছিল। ফলে ব্যাটসম্যানদের যদিও বা বলের টার্ন বুঝতে অসুবিধে হয়েছে, তারা কিন্তু পিচে বল পড়ার পর দেখেশুনে খেলার মতো পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল। কিংবা ক্রমশ নিচু হওয়া উইকেটে ব্যাটের কানায় লাগা বল ফিল্ডারদের হাত পর্যন্ত যায়নি। |
ওয়াংখেড়ের উইকেটে কিন্তু সাধারণত বেশি বাউন্স থাকে। আমি নিশ্চিত, এই বাড়তি বাউন্সটা আমাদের স্পিনার জুটি অশ্বিন-ওঝা, দু’জনেই উপভোগ করবে। ভারত নিশ্চয়ই আরও এক বার চেষ্টা করবে প্রথম ইনিংসে বড় রান তুলে বোলারদের এমন একটা রান-ব্যাঙ্ক দিতে, যেটাকে মূলধন করে আমাদের বোলাররা নাগাড়ে ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইন আপকে আক্রমণ করে যেতে পারে। যে ব্যাটিং লাইন আপে একটা নিশ্চিত বদল ঘটছে। ইয়ান বেল ওর স্ত্রী প্রথম সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় তাঁর পাশে থাকার জন্য দেশে ফেরত যাওয়ায়। ভারতের সেই বড় রানের প্রথম ইনিংস গড়ার লক্ষ্যে মুম্বইয়ে আমাদের যে ক্রিকেটার একশো টেস্ট ক্লাবের নতুন সদস্য হতে চলেছে, তার একটা বিরাট ভূমিকা অবশ্যই থাকবে।
বীরুকে ইংল্যান্ডে ২০০২-এর টেস্ট সিরিজে সৌরভ যখন ওপেন করার জন্য বলেছিল, ওকে আমি কাজটার বিপদের দিকগুলোকে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ, আমার কিছু অভিজ্ঞতা ছিল যখন আমাকে ইনিংস ওপেন করতে বলা হয়েছিল। বীরু কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিল। এবং ওপেনার হিসেবে কী প্রভাবটাই না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেলেছে! আমি খুশি, সে দিন বীরু আমার কথা শোনেনি বলে। ভারতের প্রথম টেস্ট ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান। টেস্টের ইতিহাসে জোড়া ট্রিপল সেঞ্চুরি পাওয়া মাত্র চার জনের মধ্যে এক জন। ওয়ান ডে-তে মাত্র দু’জন ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের মধ্যে এক জন। ব্যাটসম্যানশিপের এই সব স্পেশ্যাল কীর্তির মতোই বীরুও স্পেশ্যাল। আমি ওকে শততম টেস্টের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং আশা করছি আরও একটা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েই ও একশো টেস্টকে সেলিব্রেট করবে।
আমদাবাদে বীরুকে সেঞ্চুরি করতে দেখে ব্যক্তিগত ভাবে আমি উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলাম। আর ওকে যতটুকু আমি চিনি, নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, ও সেই ধরনের ব্যাটসম্যান যে খুব তাড়াতাড়ি ছন্দে চলে আসতে পারে। ওয়াংখেড়েতে বীরুর শততম টেস্ট খেলাটা বিশাল প্রাপ্তি। নিজে একশোর ওপর টেস্ট খেলেছি বলে জানি, একশোটা টেস্ট ম্যাচ খেলা আদৌ কোনও সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে ভারতে, যেখানে প্লেয়ারের কাছ থেকে প্রত্যাশাটা সব সময়ই খুব বেশি, সেই দেশের হয়ে এত বছর ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলে একশো টেস্টে পৌঁছনোটা আরওই কঠিন কাজ। তার জন্য প্রচণ্ড কঠিন পরিশ্রম, অধ্যবসায়, প্রচুর আত্মত্যাগ আর ক্রিকেট খেলাটার প্রতি একশো ভাগ দায়বদ্ধতার দরকার। এই সব গুণ বীরু ওর দীর্ঘ আর দুর্দান্ত উপভোগ্য কেরিয়ারে প্রচুর পরিমাণে দেখিয়ে চলেছে।
বীরুকে নিয়ে ভাবতে বসলেই আমার প্রথম যে শব্দটা মনে আসে সেটা হল বিনোদন। যেটা আমাকে এক জন আপাদমস্তক বীরু-ভক্ত বানিয়েছে। ও বড় রান করুক বা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাক, ওর হাবভাব আর মানসিকতা সব সময়ই একই থেকেছে। ও এক জন তীব্র ইতিবাচক মনোভাবের মানুষ। যার প্রভাব ওর চমকপ্রদ ব্যাটসম্যানশিপে ধরা পড়ে। টেস্টে ওর ২৩টা টেস্ট সেঞ্চুরি। পঞ্চাশের ওপর ব্যাটিং গড়। কিন্তু তার চেয়েও যেটা গুরুত্বের ও এই রানগুলো যে রকম উত্তেজক ব্যাটিংয়ে করেছে সেটা। বীরুর ব্যাটিং মানে এতটাই বিনোদন যে, সেটা চাখতে আমি যে কোনও দাম দিতে বা যত দূরেই হোক যেতে রাজি আছি।
বীরুর ব্যাটিং স্টাইলটা খুব সহজ। আর সেটা ওর খেলায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই আসে, যেহেতু ওর জীবনদর্শনটাও ওর ব্যাটিংয়ের মতোই সহজ-সরল। আমাদের এই তথ্যটা থেকে মোটেই চোখ সরানো উচিত নয় যে, বীরু ওর টেস্ট অভিষেকে মিডল অর্ডারে নেমে দুর্দান্ত দক্ষিণ আফ্রিকান বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ওদের মাঠে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক জন প্রতিভাবান মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান থেকে নিজেকে বিশ্বের এক জন অন্যতম সেরা বিধ্বংসী ওপেনিং ব্যাটসম্যানে পরিণত করে তোলাটা বীরুর স্কিল আর ওর পরিষ্কার মনেরই মহান স্বীকৃতি। ওয়েল ডান, বীরু! |