|
|
|
|
আলোর শহরে হাজার রং |
তাপস ঘোষ • চন্দননগর |
ভায়োলিন বাজাচ্ছে ভালুক।
দেখে চমকে গিয়েছে শ্রীরামপুরের সাত বছরের পম্পা চক্রবর্তী। নানা মজা করছে জোকার। উপরে টুপি ছুড়ছে। পম্পার হাততালি থামে না।
এমন নানা মজা এখন ছড়িয়ে গোটা চন্দননগর জুড়ে। উৎসবের এই শহর যেন এক মায়ানগর! আলোর কেরামতিতে যে কত কিছু করা সম্ভব, তা চার দিনের জগদ্ধাত্রী পুজোয় এসেই বোঝা যায় মন্তব্য বনগাঁ থেকে আসা এক মহিলার।
অষ্টমীর দুপুরে জনজোয়ার শহরে। একটা ভিড় ভদ্রেশ্বর থেকে শুরু হয়ে এসে পৌঁছচ্ছে চন্দননগর স্টেশনে। উল্টো দিক থেকে আর এক জনস্রোত আসছে চন্দননগর স্টেশন থেকে। তা শেষে হচ্ছে ভদ্রেশ্বরে। রাত যত বেড়েছে রাজপথের দখল নিয়েছেন উৎসবপ্রেমীরা। |
|
নানা থিমের মণ্ডপে যেমন ভাসছে এ শহর, তেমনই হাতছানি দিচ্ছে রকমারি আলো। বস্তুত, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী আর আলো যেন পরস্পরের পরিপূরক!
উর্দিবাজারে দাঁড়ালে যেমন ভালুকের ভায়োলিন বাজানো, জোকারের মজা বা সার্কাস দেখা যাচ্ছে, তেমনই বাগবাজারে পৌঁছলে চোখ টানছে আলোর দোলনা, আলোর ঢেঁকি-সহ ছোটদের খেলার দুনিয়া। যা নগরায়নের দাপটে ক্রমশ বিলুপ্তির পথে পৌঁচ্ছচ্ছে। প্রায় ৪২ ফুট উঁচু সাদা আলোর আইফেল টাওয়ার তুলে ধরেছে বড়বাজার সর্বজনীন। শহর জুড়ে এমন উদাহরণ আরও ছড়িয়ে রয়েছে।
চন্দননগরের আলোকশিল্প এখন প্রায় কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে। বছরের গোড়া থেকেই যে প্রস্তুতি শুরু হয়, তা জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রায় এসে শেষ হয়। এ শহরের প্রবীণ আলোকশিল্পী শ্রীধর দাস এখন আর সে ভাবে আলোর কাজ করেন না। বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমানে শুধু নিজের পাড়া কলুপুকুরের আলো করেন। এ বার এলইডি আলোয় বানিয়েছেন স্পাইডারম্যানের কার্যকলাপ। শ্রীধরবাবুর কথায়, “পঞ্চাশের দশকের গোড়ায় আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন আলোর এত প্রচলন ছিল না। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে তো বটেই, দেশেও। চন্দননগরের আলোর এখন জগতে্জাড়া নাম। এই শিল্প এ শহরে কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছে। খরচ বাড়ছে। সরকারি সাহায্য পেলে এই শিল্প আরও উন্নত হতে পারে।” |
|
সূর্যের আলো বাঁচিয়ে রেখেছে প্রাণিজগৎ এটাই আলোর থিম বোরো চাঁপাতলার। শোভাযাত্রায় থাকছে ব্যাঙ্ককের বৌদ্ধমন্দির, আমেরিকার ডিজনিল্যান্ডও। সবই এলইডি আলোয়। শিল্পী বাবু পাল। তাঁর কথায়, “আগে টুনি বাল্ব ছিল। এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে এলইডি। তাতে খরচ কম হয়। আলোরও উজ্জ্বলতা বাড়ে।”
কালো ফনমাইকা বোর্ডে প্রথমে ছবি এঁকে নেন শিল্পীরা। সেই ছবি অনুযায়ী বসানো হয় বাল্ব। আলোকে ঠিকমতো চালনা করার কারিগরি থাকে। শিল্পীদের কথায়, “পরিশ্রমসাপেক্ষ কাজ। বহু খুঁটিনাটি থাকে। অনেক শিল্পী একযোগে কাজ করেন।” নাড়ুয়া সর্বজনীন আলোর মাধ্যমে বলেছে বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তার কথা। ব্যাঙের ছাতা, বাবুই পাখির বাসা, পায়রার খোপ কত কিছু! আর বড় রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে রকমারি আলোর গেট। বাড়ি থেকেও ঝুলছে আলোর মালা। উৎসবের শহরে কত রং!
|
— নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|