নিজস্ব সংবাদদাতা • ডানকুনি |
ফের ডানকুনির একটি কারখানায় কাজে ইচ্ছুক শ্রমিকদের বের করে নিয়ে গিয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দ বলেন, “আমি পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলছি। কোনও কারখানায় বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা যাবে না।”
কয়েকটি নামি কোম্পানির মদ ‘বটলিং’ করা হয় ওই কারখানায়। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে অন্তত ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। কারখানার সিইও বিনয় কুমার বলেন, “তৃণমূলের শ্রমিক নেতা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার কারখানায় এসে বলেন, কর্মীদের বেতন বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ অবশ্য এখনও শেষ হয়নি। আমি ওঁকে বলি, উৎপাদনভিত্তিক মজুরি বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু কোনও আলোচনায় না এসে একতরফা ভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হল। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি জেলা শ্রম দফতরেও সব জানিয়েছি।”
কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বুধবার প্রদীপবাবুর দলবল (যাঁদের মধ্যে কারখানার শ্রমিকদের একাংশও রয়েছে) গিয়ে কাজে যোগ দিতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের জোরজবরদস্তি করতে কাজ করায় বাধা দেন। বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। ঘটনার পরেই নোটিস দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, উৎপাদন বন্ধ রাখায় তাঁদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ভবিষ্যতে কঠোর পদক্ষেপ করা হলে কর্তৃপক্ষ তার জন্য দায়ী থাকবেন না।
প্রদীপবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “যে মালিক চুক্তিতে থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের টিফিনের টাকা-সহ প্রতিদিন ৪০ টাকা দিতে অস্বীকার করেন, তাঁর সঙ্গে চুক্তির কী আছে? শ্রমিকরাই কাজ করতে না চাইলে আমরা কী করব?” তাঁর দাবি, “কোম্পানির যখন সময় খারাপ ছিল, আমরা তো তখন লে-অফও (সাময়িক কাজ হারানো) মেনে নিয়েছিলাম।”
সম্প্রতি ডানকুনির ভগবতী বিস্কুট কারখানাতেও একই ভাবে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলনেরও নেতৃত্বে ছিলেন প্রদীপবাবু। বিষয়টি রাজ্য প্রশাসন অবধি গড়ায়। ফের একই ঘটনা ঘটায় প্রশাসনের কর্তারাও চিন্তিত। বিনয় কুমার বলেন, “বিনা নোটিসে কেউ যদি কাজ বন্ধ করে দেয়, অথবা আলোচনা না করে, তা হলে কী করব? আমরা তো কারখানা চালাতেই চাই।” যা শুনে প্রদীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, “ওঁরা যদি চাইতেন, ২০ টাকা টিফিন খরচ দিয়ে শ্রমিকদের কাজ করিয়ে নিতে পারতেন। বড় বড় চারটি কোম্পানির মদ বটলিং হয় এখানে। অথচ, শ্রম আইনে নির্ধারিত মাইনেও কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দেন না। মাটি কেটেও লোকে এর থেকে বেশি মজুরি পায়।” তাঁর আরও বক্তব্য, “মদ কারখানায় কাজ করায় শরীরের ক্ষতিও আছে। সেই টাকা তো আমরা চাইনি।”
কারখানা সূত্রের খবর, এর আগেও শ্রমিকদের নিয়ে সেখানে সমস্যা হয়েছিল তৃণমূলের মদতে। বিনয়বাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী শিল্প আনার চেষ্টা করছেন। তাঁর উপর আস্থা রয়েছে। তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছি।” জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, বারবার প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় দলের একাংশই তাঁর উপরে রুষ্ট। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “ওখানে একটা গোলমালের কথা শুনেছি। দলীয় স্তরে বিশদে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।” |