বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেছেন, আজমল কসাবের মৃত্যুদণ্ড মুম্বই-সন্ত্রাসে নিহত মানুষদের স্বজনবর্গকে একটা ‘ক্লোজার’ এনে দিল। ক্লোজার মানে, খুব বিশেষ অর্থে, সমাপন। অপরাধী অপরাধ করেছিল, অনেক মানুষ তার শিকার হয়েছিলেন। জবাবে তাঁরা কিছু করতে পারেননি। দাঁড়িপাল্লা সম্পূর্ণ অ-সমান হয়ে ছিল। রাষ্ট্র, নাগরিকদের প্রতিনিধি এবং প্রহরী হিসাবে, অপরাধীকে দণ্ড দিল। দাঁড়িপাল্লায় ভারসাম্য এল। হালভাঙা পালছেঁড়া গান সমে ফিরল।
ফিরল কি? অপরাধ ও শাস্তির ভারসাম্য সত্যিই প্রতিষ্ঠিত হল? আক্রান্ত নাগরিকদের অনেকে বলেছেন, তাঁরা সন্তুষ্ট। এ-অনুভূতিকে অশ্রদ্ধা করলে অন্যায় হবে। যাঁর গেছে, তাঁর গেছে। তিনি এত দিন তীব্র অতৃপ্তি বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কসাবের মৃত্যু যদি সেই অতৃপ্তির সমাপন ঘটাতে পারে, তাঁর কাছে সেটা খুব বড় ব্যাপার। তবু প্রশ্ন থেকে যায়। সকলেই মনে করেন, এ ভাবে ‘ক্লোজার’ হয়? কী করে জানলাম, অন্য রকম মন নেই? |
এক প্রশ্ন আর এক প্রশ্নকে ডেকে আনে। ব্যক্তি যা ভাবেন, তা কি সতত তাঁর নিজস্ব ভাবনা? না কি, সব্বাই ভাবে বলে সব্বাই ভাবে তা-ই? দশচক্রে আমরা অনায়াসেই এক ভাবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। বিশেষ করে যখন প্রযুক্তির অভিশাপে টিভি চ্যানেলে, ফেসবুকে, টুইটারে, এসএমএসে দ্রুত, অতি দ্রুত একে অপরের ভাবনার প্রতিধ্বনি হয়ে উঠছি, তার ওপর সেই ভাবনায় যখন বিদেশমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সিলমোহর লাগিয়ে দিচ্ছেন, তখন, ভয় হয়, অন্য ভাবনার আর বাঁচার উপায় নেই।
এবং, এক ভয় থেকেই আসে অন্য ভয়। ‘ক্লোজার’-এর মলাটে যে অনুভূতিটিকে বরণ করে নিচ্ছি আমরা, তার নাম প্রতিশোধ নয় তো? খুনের-বদলে-খুন নামক সেই প্রাচীন (অ)ধর্মটিই সমাপনের এই তত্ত্বটিকে ধারণ করে রাখছে না তো? কসাব খুনি, রাষ্ট্র তাকে ‘খুন’ করে আমার হয়ে তার বদলা নিল এই যদি ভারসাম্য হয়, তা হল প্রতিশোধের ভারসাম্য। প্রতিহিংসারও।
এটাই একমাত্র সম্ভাবনা নয়। প্রতিশোধের স্পৃহাকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়েও ভারসাম্যের বোধে স্থিত থাকা সম্ভব। ‘বদলা’ নেওয়ার কোনও চিন্তা মনের মধ্যে স্থান না দিয়েও কসাবের ফাঁসিতে একটা সন্তুষ্টি বোধ করতে পারেন কেউ ন্যায়বিচারের নৈর্ব্যক্তিক সন্তুষ্টি। কিন্তু সে অতি কঠিন পথ। তার দু’দিকেই গভীর খাদ। প্রতিহিংসার। প্রতি-হিংস্রতার। |