শৈলেনকুমার দত্তর ‘উইলিয়ম কেরি: ২৫০ বছরেও ভুলেই থাকব?’ (১৭-১০) পড়ে মনে এল রেভারেন্ড জেমস উইলিয়মসনের কথা। শ্রীরামপুর মিশন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বীরভূম জেলায় ব্যাপটিস্ট মিশনের কাজ শুরু করে। বীরভূম জেলায় ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রধান দফতর ছিল সিউড়িতে। রেভারেন্ড জেমস উইলিয়মসন ছিলেন প্রথম দিকের মিশনারি। তিনি ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে শল্যচিকিৎসক হিসাবে ভারতবর্ষে আসেন। কলকাতায় আসার কিছু কাল পর উইলিয়ম কেরি এবং মার্শম্যান শ্রীরামপুর মিশন থেকে তাঁকে সিউড়িতে পাঠান। তিনি ছিলেন সিউড়ি জেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন। সঙ্গে ছিল মিশনের কাজ।
W. Adam-এর ‘Report on Vernacular Education in 1837’ থেকে আমরা জানতে পারি যে, সেই সময় এই জেলায় দুটি ইংরেজি স্কুল ছিল। একটি স্কুল উইলিয়মসন চালাতেন সিউড়ি শহরে। আর একটি স্কুল ছিল রায়পুরের বিখ্যাত সিংহ পরিবারের পারিবারিক স্কুল। দুটির মধ্যে উইলিয়মসনের স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম। তিনি ও তাঁর স্ত্রী সিউড়ি এবং পাশ্ববর্তী অঞ্চলে শিক্ষাদানের মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও প্রসারের উদ্যোগী হন। তিনি যে ইংরেজি স্কুলটি চালাতেন, সেখানে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করতেন। |
এর আগে মিসেস উইলিয়মসন একটি বালিকা বিদ্যালয় চালাতেন। কিন্তু ১৮৩৪ সালের অক্টোবর মাসে এক ছাত্রী খিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হলে এবং আরও দু’জন খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করলে স্কুলটি কার্যত ভেঙে যায়। ওই সময়েই মিশনারি দ্বারা পরিচালিত বালকদের বাংলা স্কুলটিও একই কারণে ভেঙে যায়। দুটি স্কুলের অল্পসংখ্যক ছাত্র এবং ছাত্রী নিয়ে একটি স্কুল করা হয়।
উইলিয়মসন এবং তাঁর সহধর্মিণী ছিলেন বীরভূম জেলায় আধুনিক শিক্ষা, স্ত্রীশিক্ষা এবং ইংরেজি শিক্ষার পথিকৃৎ। শোনা যায়, তিনি উচ্চ মানসিকতার মানুষ ছিলেন। প্রায় সারা জীবন তিনি সিউড়িতে অতিবাহিত করেন, ৭৪ বছর ৬ মাস বয়সে এখানেই তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁর নামে সিউড়ি শহরে এখনও একটা রাস্তা আছে। সিউড়ি বড়বাগান অঞ্চলে ইংরেজদের সমাধিক্ষেত্রে অত্যন্ত অবহেলার মধ্যে জীর্ণ অবস্থায় এখনও টিকে আছে তাঁর সমাধিটি। এটি ইতিহাসের অতি মূল্যবান উপকরণ। এটির পাশেই আর একটি সমাধি রয়েছে। আকৃতি ও আয়তন হুবহু এক। কিন্তু তার ফলকটি উধাও। খুব সম্ভবত এটি উইলিয়মসনের সহধর্মিণীর সমাধি।
সিউড়ি শহরে খ্রিস্টানরা সংখ্যালঘুদের মধ্যেও সংখ্যালঘু। সংখ্যা অত্যন্ত কম। গণতন্ত্রে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কম হলে রাজনীতিবিদরা তাঁদের গ্রাহ্যের মধ্যে আনেন না। আধিকারিকরাও নেতাদের ইচ্ছার অনুগামী। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পরিচালনাধীন প্রাচীন এই সমাধিক্ষেত্রটি থেকে ইতিহাসের মূল্যবান উপাদানগুলি দ্রুত লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলিকে অবিলম্বে সংরক্ষণ করার জন্য আবেদন জানাই।
সুকুমার সিংহ।লালকুঠিপাড়া, সিউড়ি, বীরভূম |