|
|
|
|
মমতার অনাস্থা |
আডবাণী চান, দল পিছপা সঙ্ঘের চাপে |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
বিজেপির শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। সংসদের রণকৌশল রচনার যাবতীয় বৈঠক হয় তাঁরই বাড়িতে। কিন্তু তাঁর কর্তৃত্বকেই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছেন বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চাইছেন, তাতে সায় দিয়ে এগিয়ে যেতেই চেয়েছিলেন আডবাণী। কিন্তু সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতারা আডবাণীর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁর সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। শুধুমাত্র তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতেই গত কাল এনডিএ বৈঠকের পর লিখিত বিবৃতিতে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি বিবেচনা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দলের চাপেই আডবাণী এখন অনাস্থা না আনার জন্য মমতাকে অনুরোধ করতে চলেছেন।
আডবাণীর বক্তব্য ছিল, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে সিংহভাগ দল। এই অবস্থায় অনাস্থা প্রস্তাবে বিরোধীরা যদি হেরেও যায়, কারা সরকারের পাশে রইল, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাঁর মতে, এই ভোটে হার-জিত গুজরাতের নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে না। সেখানে নরেন্দ্র মোদী এমনিই জিতবেন। কিন্তু অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে কংগ্রেস-বিরোধিতার মঞ্চে আরও নতুন বন্ধুকে পেতে পারে বিজেপি। মমতার মতো যাঁরা সংসদে সরকারের বিরোধিতা করবেন, ভবিষ্যতে এনডিএ-র বিস্তারের জন্য তাঁদের কাছে পাওয়ার একটি সুযোগও বিজেপি পাবে।
কিন্তু সঙ্ঘ নেতত্বের যুক্তি, শুধুমাত্র খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির মতো একটি বিষয়ে যাঁরা কংগ্রেসের বিরোধিতা করবেন, তাঁরা ভবিষ্যতে এনডিএ-তে সামিল হবেন, এমন নিশ্চয়তা কোথায়? বিজেপি যদি লোকসভা নির্বাচনে একার ক্ষমতায় ২০০-র কাছাকাছি আসন না পায়, নতুন শরিক আসা তো দূরের কথা, বর্তমান বন্ধুদেরও এনডিএ-তে ধরে রাখা মুশকিল হবে। তা ছাড়া সরকার সংসদে ভোটাভুটি-সহ বিতর্কই যখন মানতে চাইছে না, অনাস্থা প্রস্তাব মেনে নেবে ভাবাটা নেহাতই কষ্টকল্পনা হবে। আর যদি মেনে নেয়ও, নানা কৌশলে অনেক দলকে পাশে টেনে নেবে কংগ্রেস। সঙ্ঘের সাফ কথা, সরকার মানবে না জেনেও প্রকাশ কারাটরা ভোটাভুটি-সহ বিতর্কের দাবি জানাচ্ছেন। এতেও যেমন বিজেপির লাভ নেই, লাভ নেই মমতার অনাস্থা প্রস্তাবে সায় দিয়েও। নরেন্দ্র মোদীও আডবাণীর প্রস্তাবে আপত্তি তুলে বলেছিলেন, গুজরাতে ভোটের আগে বিজেপি লোকসভায় অনাস্থা ভোটে হেরে গেলে কর্মীরা হতোদ্যম হয়ে পড়তে পারে। সঙ্ঘও সে যুক্তি নেয়।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়েও আডবাণী এ ভাবে এনডিএ-র বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পূর্ণ সাংমার পাশে জয়ললিতা ও নবীন পট্টনায়কের মতো নতুন বন্ধুদের পেলেও এনডিএ-র দুই গুরুত্বপূর্ণ শরিক জেডি(ইউ) ও শিবসেনা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছিল। সেই সময়ও নীতীশ কুমার আডবাণীকে ফোনে বলেছিলেন, আজ সাংমাকে সমর্থনের প্রশ্নে জয়ললিতা বিজেপির সঙ্গে এলেও তিনি কী এনডিএ-তে যোগ দিচ্ছেন? তা কিন্তু নয়। বরং লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ যদি সরকার গড়ার অবস্থায় চলে আসে, তা হলে আরও অনেক শরিক সঙ্গে আসবে। সুতরাং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ার ভাবনা অযৌক্তিক।
সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের আশীর্বাদধন্য নিতিন গডকড়ীকে সরানোর চেষ্টা করে দলে আরএসএসের নিয়ন্ত্রণ খর্ব করতে তৎপর হয়েছেন বিজেপির কিছু শীর্ষ নেতা। কিন্তু সঙ্ঘও তাদের রাশ আলগা করতে নারাজ। তাই রাম জেঠমলানী, যশবন্ত সিন্হাদের মতো নেতারা যতই বিদ্রোহ করুন, সঙ্ঘ শক্ত হাতে তা মোকাবিলা করতে উদ্যত হচ্ছে। এ জন্য আডবাণীর মতো শীর্ষ নেতাদের অপ্রাসঙ্গিকও করে দিতে চান সঙ্ঘ নেতৃত্ব। |
|
|
|
|
|