দ্রুততা-গোপনীয়তা, চাণক্যের ছাপ চিত্রনাট্যে
রাষ্ট্রপতি হিসাবে তিনি শপথ নিয়েছেন চার মাসও হয়নি। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই মুম্বই সন্ত্রাসের আসামি আজমল কসাবের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
রাইসিনা হিলসে পৌঁছনোর পরে একদা ঝানু রাজনীতিক প্রণব মুখোপাধ্যায় এ-ও বুঝিয়ে দিলেন, নিজের সাংবিধানিক পদের তাকত দেখিয়ে ‘অতিসক্রিয়তায়’ বিশ্বাসী নন তিনি। সরকারের সঙ্গে সংঘাতও তাঁর পথ নয়। বরং তাঁর নিজের কথাতেই, এক জন ‘টেক্সবুক ম্যান’ বা ‘ম্যান অফ সিস্টেমস’ তিনি। যদিও দেশের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রণববাবু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এমনকী কংগ্রেসের একাংশের ধারণা ছিল বিপরীত। তাঁরা মনে করছিলেন, রাইসিনা হিলসে পৌঁছে সরকারকে বেগ দিতে পারেন প্রণববাবু। বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যেতে পারেন।
কিন্তু তাঁদের সকলকেই ভুল প্রমাণিত করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। যে ক্ষিপ্রতায় কসাবের মৃত্যুদণ্ডের আর্জি খারিজ করলেন প্রণববাবু, তাতে স্পষ্ট যে সরকারের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতাই শুধু করছেন না, তিনি চিত্রনাট্যেরও শরিক। এমনকী ঠিক কোন সময়ে কসাবকে ফাঁসি দেওয়া হবে সেই সময় নির্ধারণেও প্রণবের ভূমিকা রয়েছে। তা ছাড়া ফাঁসির সিদ্ধান্ত আগাম না জানিয়ে যে ভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করেছে সরকার, তার মধ্যেও প্রণববাবুর পরিণত বুদ্ধির ছাপ স্পষ্ট। উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রণববাবুর সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য একাধিক বার তাঁর কাছে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির এক বর্ষীয়ান নেতা আজ বলেন, আসলে প্রণববাবুকে যাঁরা কাছ থেকে দেখেননি, তাঁদের পক্ষে সবটা বোঝা সম্ভব নয়। ইন্দিরা গাঁধীর রাজনৈতিক ভাবশিষ্য ছিলেন প্রণব। প্রথম দিন থেকেই হিন্দু জাতীয়বাদের মতাদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছেন তিনি। তা ছাড়া মুম্বই নাশকতার পর যখন সন্ত্রাস রুখতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে বিজেপি খড়্গহস্ত হয়ে নেমে পড়ে, তখন তার মোকাবিলায় নেমেছিলেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। মুম্বই সন্ত্রাসের নেপথ্যে পাকিস্তানের মদত যে রয়েছে, তা নিয়ে ইসলামাবাদকে ক্রমাগত কড়া বার্তা দিয়ে তিনি কংগ্রেসের অনুকূলে হাওয়া টানতে সফল হয়েছিলেন।
আবার তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানের ফৌজদারি দণ্ডবিধি এক। সুতরাং মুম্বই সন্ত্রাসের যে ষড়যন্ত্রকারীরা পাকিস্তানে রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিক ইসলামাবাদ। সে দিক থেকে আজমল কসাবের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করে দিতে প্রণববাবু যে কোনও বিলম্ব করবেন না তা প্রত্যাশিতই ছিল।
আবার সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কসাবের মৃতুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করে রাইসিনা হিলসে সুপারিশ পাঠানোর পর রাষ্ট্রপতির অন্যথা করার সুযোগ ছিল না। কারণ, তিনি পুনর্বিবেচনার জন্য হয়তো সরকারকে পরামর্শ দিতে পারতেন। কিন্তু মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি তাঁকে খারিজ করতেই হত। বড় জোর বিষয়টি কিছু দিন ঝুলিয়ে রাখতে পারতেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু তাতেই বা কী লাভ হত ব্যক্তি প্রণবের!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.