আফজল গুরু এবং সর্বজিৎ সিংহ। দুই দেশে দুই বন্দি দিন গুনছেন উৎকণ্ঠায়। ফাঁসির আসামি দু’জনেই। কিন্তু ভাগ্য ঝুলছে নানা বিষয়ের উপরে। কসাবের প্রাণদণ্ডে ফের আলোচনায় দু’টি নামই। দু’জনের ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠল, এ বার কী?
কসাবের ফাঁসিকে স্বাগত জানালেও নরেন্দ্র মোদীর মতো বিজেপি নেতারা আজই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, আফজল গুরুকে ফাঁসি দিতে কেন এত দেরি করা হচ্ছে? এমনকী, কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও দাবি তুলেছেন, আফজলের মামলারও দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে, কসাবের মতো আফজলের ক্ষেত্রেও কি একই রকম তৎপরতা দেখা যাবে? একই ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, কসাবের প্রাণদণ্ড কি পাকিস্তানের জেলে বন্দি ফাঁসির আসামি সর্বজিতের মামলার উপরেও প্রভাব ফেলবে না?
রাষ্ট্রপতির সচিবালয় সূত্রে জানানো হয়, প্রণব মুখোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই আফজল-সহ ন’টি প্রাণভিক্ষার আবেদন সুশীলকুমার শিন্দের কাছে পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়েছেন। ১ অগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন শিন্দে। তাঁর পূর্বসূরি পি চিদম্বরমের আমলে যাদের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল, শিন্দেও তার সঙ্গে একমত কি না, সেটাই জানতে চাইছে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়। এর মধ্যে অবশ্য নতুন কিছু নেই। ২০০৮ সালে শিবরাজ পাটিলের জায়গায় যখন চিদম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন, তখনও এই প্রথা মানা হয়েছিল। শিন্দে আজ জানান, তাঁর টেবিলে আফজলের ফাইল আসার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি তা ছেড়ে দেবেন। |
কিন্তু তাই বলে অদূর ভবিষ্যতে আফজলের ফাঁসি হয়ে যাবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই এক বার রাষ্ট্রপতির কাছে আফজলের ফাঁসির সুপারিশই করেছে কেন্দ্র। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা বদলে দেবেন, এমন সম্ভাবনা কম। রাষ্ট্রপতিও সাধারণত সরকারের সুপারিশ মেনেই সিদ্ধান্ত নেন। কাজেই তিনিও আফজলের ফাঁসিতেই সিলমোহর বসাবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। তবে সংবিধানের ৭২তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তার কোনও সময়সীমা নেই। মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আফজলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রশ্নটাই বড়। আফজল কাশ্মীরি। তাঁর ফাঁসি হলে কাশ্মীরিদের থেকে কংগ্রেসের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাশ্মীরেও সমস্যা তৈরির আশঙ্কা থাকবে। অতীতে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদও এই কারণেই আপত্তি তুলেছিলেন। আফজলকে ফাঁসিতে ঝোলালে সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়ও আছে। বহু মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশিষ্টজনও আফজলের ফাঁসির বিরুদ্ধে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে আরও একটি তথ্য দেওয়া হচ্ছে। সেখানকার কর্মীরাই বলছেন, ভারতে কিন্তু ঘনঘন ফাঁসি হয় না। কসাবের আগে ফাঁসি হয়েছিল ধনঞ্জয়ের, ২০০৪ সালের ১৪ অগস্ট।
সুপ্রিম কোর্ট আফজল গুরুর ফাঁসির আদেশ দেয় ২০০৫-এ। ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল ২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়ে আর্জি জানান আফজলের স্ত্রী। শেষ পর্যন্ত গত বছরের অগস্টে আফজলের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজের সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার পরেও প্রতিভা পাটিল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি।
প্রশ্ন আছে সর্বজিতের ভবিষ্যৎ নিয়েও। বিশ বছর ধরে পাকিস্তানের কোট লোকপত জেলে আটক সর্বজিতের মুক্তি নিয়েও কথা হয়েছে। এমনকী, কয়েক মাস আগে তাঁর মুক্তির কথা ঘোষণাও করে দেয় পাকিস্তান। পরে অবশ্য পাক প্রশাসন জানায়, সর্বজিৎ নয়, মুক্তি দেওয়া হচ্ছে সুরজিৎ সিংহকে।
কূটনীতিকরা বলছেন, কসাবের ফাঁসির পরে কিন্তু সর্বজিতের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেল। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত সর্বজিৎকে মুক্তি দিতে গেলে এ বারে দেশের সাধারণ মানুষের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে পাক সরকারকে। তা ছাড়া, আছে সেনা, আইএসআই, এমনকী জঙ্গি সংগঠনগুলিরও চাপ। নড়বড়ে জারদারি প্রশাসন এত কিছু উপেক্ষা করতে পারবে না।
সর্বজিতের স্বজনরা আজ কসাবের ফাঁসি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। না তাঁর বোন দলবীর কৌর, না তাঁর বড় মেয়ে স্বপনদীপ কৌর। অনেকেই বলছেন, ওঁদের দোষ নেই। সর্বজিতের ভবিষ্যৎ তো এখন গভীর সঙ্কটে। |