|
|
|
|
শেষ সময়ে আল্লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আর একটা বুধবার। আ ওয়েডনেসডে। ২৬/১১-র মতোই। আর মাত্র কয়েক মিনিট পৃথিবীর বাতাস থেকে অক্সিজেন নেবে সে। সি-৭০৯৬। গত চার বছর ধরে যে বিখ্যাত স্নায়ুর জোরে প্রশাসন এবং বিচারবিভাগের সঙ্গে
|
‘আম্মিকে জানিও’
শেষ ইচ্ছে জানতে
চাওয়ায়, কিছু ক্ষণ
চুপ
করে থেকে
তার জবাব |
সে বয়ানের লুকোচুরি খেলেছে, কখনও বলেছে এক কথা, তার পরেই গেয়েছে তার উল্টো সুর, সেই মেজাজটাই যেন কোথায় পালিয়েছে। কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে সে।
এই ২৫ বছরের যুবককেই কিছু দিন আগে পড়ে শোনানো হয়েছে তার মৃত্যু পরোয়ানা। জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতি খারিজ করে দিয়েছেন তার ক্ষমাপ্রার্থনা। তার পরে তাকে দিয়ে সই করানো হয়েছে সেই মৃত্যু পরোয়ানায়।
তখনও তো তার স্নায়ুতে টোল পড়তে দেখা যায়নি।
কিন্তু আজ, ফাঁসিকাঠে ওঠার কয়েক মিনিট আগে যেন টলে গেল সে, সি-৭০৯৬। আজমল আমির কসাব। জিগ্গেস করল, “বাড়িতে কি খবর দেওয়া হয়েছে?”
খবর? পাক পঞ্জাবের ফরিদকোট গ্রামের বাসিন্দা নুরি লাইয়ের (কসাবের মা) সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি ভারত সরকার। চার বছর আগে ‘জেহাদে’ বেরোনোর সময় আম্মির কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে আশীর্বাদ চেয়েছিল সে। আম্মি, পৃথিবীতে তার সব থেকে কাছের মানুষ। তাই শেষ ইচ্ছে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে চুপচাপ থেকে পরে সে বলেছিল, “আম্মিকে জানিও।” শেষ ইচ্ছে। তা-ও পূর্ণ হল না!
তত ক্ষণে ভেঙে পড়ার সব চিহ্ন দেখা যাচ্ছে তার শরীরে। জেলেরই এক অফিসার পরে বলেছেন, “ওর শরীরী ভাষাতেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল সব।” এর পরেই সে অস্ফূটে বলে ওঠে, “আল্লা, আমাকে মাফ করে দিও। এমন ভুল যেন আর না হয়!” |
|
৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় খারিজ করে দেন কসাবের প্রাণভিক্ষার আর্জি। অর্থাৎ, শুরু হয়ে যায় ‘অপারেশন এক্স’। যার খবর জানতেন হাতে গোনা কয়েক জন। ১২ তারিখ কসাবকে জানিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত। আর্থার রোড জেলের সেলের ভিতরে তাকে সেই মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনিয়েছেন এক সিনিয়র অফিসার। সই-ও করিয়ে নিয়েছিলেন। তার পরে গত পরশু মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন শাখা-মুম্বই পুলিশের বাছাই করা অফিসারেরা আর্থার রোডের চার বছরের আস্তানা থেকে বন্দি ‘সি ৭০৯৬’-কে সরিয়ে নিয়ে যান পুণের ইয়েরওয়াডায়।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল, আকাশ পথে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু একটা খচখচানি থেকেই গিয়েছিল। যদি জঙ্গি-হানা ঘটে? আর্থার রোড থেকে ইয়েরওয়াডা, গাড়িতে তিন-চার ঘণ্টার পথ। ‘গাড়িই নিরাপদ’, এই চিন্তা করেই বদলানো হয় সিদ্ধান্ত। এর এক দিন আগেই বিশেষ বিমানে উড়িয়ে আনা হয় এক দক্ষ ফাঁসুড়েকে।
পাকিস্তানকেও জানানোর ব্যবস্থা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলেন, “বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে কসাবের ফাঁসির সিদ্ধান্ত পাকিস্তান সরকারকে জানানো হয়। যখন ওরা চিঠি নিতে অস্বীকার করে, আমরা ফ্যাক্স করে জানাই।” বিদেশসচিব আর কে সিংহ জানান, ভারতীয় হাইকমিশন মারফত পাকিস্তানে কসাবের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, “ক্যুরিয়রে তাদের চিঠি পাঠিয়েছিল হাইকমিশন। ক্যুরিয়রের রসিদও আছে আমাদের কাছে। পরে সেটা মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।” তাঁর দাবি, তবে কসাবের দেহ নিতে চায়নি কোনও পক্ষই।
তাই ২৫ বছরের নিঃসঙ্গ জঙ্গিকে ফাঁসির পরে ইয়েরওয়াডা জেলেই কবর দেওয়া হয়। “তবে বিদেশ মন্ত্রক তরফে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে, যদি কেউ কসাবের দেহ নিতে চান, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁকে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনও দাবিদার নেই”, জানান শিন্দে। তিনি আরও বলেন, “কসাবের দেহ ভারতে থাকায় মনে হয় না কারও সমস্যা হবে। কারণ ভারতকেই ভুগতে হয়েছে...।”
বুধে ঊষা। আজ সাড়ে সাতটার সময় ফাঁসি হয়ে গেল কসাবের। আটটা নাগাদ খবর চলে এল জেলের পাঁচিল টপকে। ছড়িয়ে পড়ল গোটা দেশে।
যে কয়েক জন অফিসার শেষ মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন, তাঁদের কাছ থেকেই পরে টুকরো টুকরো হয়ে উঠে এসেছে ফাঁসির ছবি। ভিডিওতে তুলে রাখা হয়েছে যে দৃশ্য। তাঁরা ছাড়াও তখন সেখানে হাজির আইটিবিপি-র ২০০ জওয়ানের একটি দল, যারা ২০০৯ সালের মার্চ থেকে পাহারা দিচ্ছে কসাবকে। ‘অপারেশন এক্স’ শেষ। তাঁরা এখন নতুন কাজের অপেক্ষায়।
|
অপারেশন এক্স |
১৬ অক্টোবর কসাবের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করার জন্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে সুপারিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।
৫ নভেম্বর আবেদন খারিজ করলেন রাষ্ট্রপতি।
|
৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে আসা ফাইলে সই করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। ৮ নভেম্বর তা পাঠানো হল মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে।
|
১৮ নভেম্বর গভীর রাতে মুম্বই থেকে বিশেষ বিমানে উড়িয়ে আনা হল দক্ষ ফাঁসুড়েকে। খুব
ভোরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল পুণের ইয়েরওয়াডা জেলে।
১৯ নভেম্বর কসাবকে মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেল থেকে আনা হল ইয়েরওয়াডা জেলে।
২১ নভেম্বর সকাল ৭.৩০ কসাবের ফাঁসি
সকাল ৭.৪৫ অপারেশন এক্স-এর প্রধান স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানালেন
সব কিছু ঠিক মতো হয়ে গিয়েছে। |
|
|
|
|
|
|