নিজস্ব সংবাদদাতা • কীর্ণাহার |
পরিবারের দোল-দুর্গোৎসব রয়েছে। পুজো হয় নানা দেবদেবীর। কিন্তু এ সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় নানুরের কীর্ণাহার সরকার বাড়ির গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসব। সাড়ে তিনশো বছর পরেও ছবিটা বদলায়নি এতটুকুও।
প্রচলিত আছে, দুর্গাপুজোর পরে শুক্লাপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রাজবেশে গোচারণে গিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই জন্য ওই তিথিকে গোষ্ঠ অষ্টমী বলা হয়ে থাকে। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে সরকার বাড়িতেও ওই তিথি উপলক্ষে শুরু হয় গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসব। বুধবার মন্দির থেকে দু’টি আলাদা সিংহাসনে শ্রীকৃষ্ণ, নাড়ুগোপাল ও রাধার বিগ্রহ চাপিয়ে শুরু হয় এলাকা পরিক্রমা। |
সাজানো হয় বাড়ির গরুকেও। তার পরে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে শোভাযাত্রা নিয়ে সরকার বাড়ির সদস্য ও তাঁদের অনুগামীরা পৌঁছন গ্রামের বাইরে একটি মাঠে। সেখানে পাকা বেদীতে শ্রীকৃষ্ণ, নাড়ুগোপাল ও রাধার মূর্তি বসিয়ে পুজো করা হয়। হয় পঙ্ক্তিভোজও। সরকার বাড়ির সদস্যরা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারা তাতে সামিল হন। মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয় সুসজ্জিত গরুকেও। দিনের শেষে আতসবাজি পুড়িয়ে ঘরে ফেরার পালা।
জমিদারি গিয়েছে। সরকার বাড়ির সদস্যরা কর্মসূত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। প্রাত্যহিক জীবনযাপনে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসবে আজও আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রয়েছে সাবেকিয়ানা। বুধবার ধরা পড়ল সেই চিত্র। পুরনো দিনের সেই বোলবোলা অবশ্য আর নেই। গরুর পালের পরিবর্তে এখন প্রতীকী হিসেবে একটিমাত্র গরুকে সাজিয়ে গোচারণে নিয়ে যাওয়া হয়। শোভাযাত্রায় নেই শোভা। |
গোষ্ঠ উৎসবে ভাণ্ডীরবনে ভক্তদের সঙ্গে গোচারণে চলেছেন শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রী বলরাম। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
কিন্তু তা নিয়ে আক্ষেপ নেই সরকার বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের। ৭৯ বছরের সুখশঙ্কর সরকার, ৭৪ বছরের সন্ধ্যা সরকারদের কথায়, “জমিদারির সুবাদে এক সময়ে আমাদের গোয়ালভরা গরু ছিল। গোষ্ঠ অষ্টমীর দিন ওই সব গরুদের ছিল পুরোপুরি বিশ্রাম। বিশেষ যত্ন করে গোচারণে নিয়ে যাওয়া হত তাদের। সে সব দিন কবেই হারিয়ে গিয়েছে। তবে পূর্বপুরুষদের পদাঙ্ক আজও আমরা পালন করে চলেছি।”
বর্তমান প্রজন্ম ইরা সরকার, তীর্থশঙ্কর সরকাররা বলেন, “দুর্গাপুজো-সহ আমাদের পরিবারে অন্যান্য পুজো রয়েছে। ওই সব পুজোয় বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয়পরিজনেরা যোগ দিনে না পারলেও গোষ্ঠ অষ্টমীতে সবাই সামিল হন।” |