অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • রামপুরহাট |
ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু ঋণ পেয়েও প্রত্যাখ্যান করা?
এমনটাই হয়েছে রামপুরহাটে। যেখানে রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ঋণ পেয়েও নিতে অস্বীকার করেছেন মহকুমার ১৪ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
কেন?
মাড়গ্রাম থানার দুনিগ্রামের হার্ডঅয়্যার ব্যবসায়ী সৈয়দ সরফরাজ আলি-র অভিযোগ, “দোকানটার উন্নতির জন্য দেড় লক্ষ টাকা ঋণের আবেদন করেছিলাম। মাত্র ৪০ হাজার টাকা অনুমোদন হয়েছে। তা নিয়ে কী করব বলুন তো?” ওই অল্প টাকা নিয়ে তাঁর সমস্যার কোনও সমাধান হবে না বলেই মনে করেন তিনি। একই মত রামপুরহাট থানার শ্রীকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা মহম্মদ সাহাবুদ্দিন মণ্ডলেরও। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টাকা পেয়ে তিনিও প্রত্যাখান করেছেন ঋণ। প্রত্যেকেরই অভিযোগ, “এক শ্রেণির কর্মী-আধিকারিকের গাফিলতিতেই আমরা আমাদের প্রাপ্য ঋণ থেকে বঞ্চিত হয়েছি।” সরফরাজ আলি-রা বলেন, “এ বিষয়ে জেলাশাসককে লিখিত অভিযোগ জানাবো।”
রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের রামপুরহাট শাখা থেকে জানা গিয়েছে, স্বনিযুক্তি প্রকল্পের অধীন মেয়াদী ঋণের জন্য তিন মাস আগে রামপুরহাট মহকুমার বিভিন্ন ব্লক থেকে ৩৫ জন আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩১ জন আবেদনকারীই ওই ঋণ পাওয়ার যোগ্য জানিয়ে জেলা সংখ্যালঘু উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করেছেন রামপুরহাট মহকুমার ফিল্ড সুপারভাইজার মনসুর আহমেদ।
কিন্তু ঘটনা হল, ঋণের পরিমাণ দাবি মতো না মেলায় তাঁদের মধ্যে ১৪ জন ‘অফার লেটার’ নিতে রাজি হননি। মনসুরবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা এলাকায় গিয়ে ঠিক মতো কাজ করতে পারছি না। ওই সব আবেদনকারীর ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাঁরা জিজ্ঞাসা করছেন কেন তাঁদের ঋণের পরিমাণ অর্ধেকেরও কম করে দেওয়া হয়েছে। আমরা তার সদুত্তর দিতে পারছি না।” সমস্যার সমাধানের জন্য মহকুমাশাসকের দারস্থ হয়েছেন তিনি।
ওই আবেদনকারীদের দাবি মতো ঋণ না পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যাটা ঠিক কী ছিল?
রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলার রিজিওন্যাল কো-অর্ডিনেটর আল হিলাল রশিদি-র যুক্তি, “রামপুরহাট মহকুমার ঋণের আবেদনকারীদের কাগজপত্রে অনেক ত্রুটি থাকার জন্যই ঋণের পরিমাণ কমানো হয়েছে।” তিনি এর জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন ফিল্ড সুপারভাইজার মনসুর আহমেদকেই। যদিও মনসুরবাবুর পাল্টা দাবি, “কাগজে ত্রুটি থাকলে প্রাথমিক ভাবেই তো ওই ১৪ জনের আবেদন বাতিল হয়ে যেত! কিন্তু আবেদন গ্রহণ করার পর কোন যুক্তিতে ঋণের পরিমাণ কমানো হল তা বোঝা যাচ্ছে না।”
স্পষ্টত পুরো বিষয়টিতে দফতরের কর্মী-আধিকারিকদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করছেন ওই আবেদনকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণের দাবি জানিয়েও ওই কর্মী-আধিকারিকদের সদিচ্ছার অভাবেই এমনটা হল। তাঁদেরই একজন রামপুরহাট লোকোপাড়ার কাপড়ের ব্যবসায়ী উকিল আনসারি-র ক্ষোভ, “১ লক্ষ টাকার বদলে মাত্র ৪০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ওই টাকায় আমি কী করব? এক শ্রেণির সরকারি কর্মীদের গাফিলতির জন্যই আমাদের ভুগতে হচ্ছে।”
সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যেই রামপুরহাটের মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায়কে বিষয়টির খোঁজ নিতে বলেছেন বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। রত্নেশ্বরবাবু জানিয়েছেন, জেলাশাসকের নির্দেশ মতো রামপুরহাট মহকুমার ফিল্ড সুপারভাইজারের কাছে তিনি বিষয়টি সম্বন্ধে খোঁজ নিয়েছেন। রত্নেশ্বরবাবু বলেন, “আপাতত ফিল্ড সুপারভাইজার ও রিজিওন্যাল কো-অর্ডিনেটর বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন।”
অন্য দিকে, রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান আবু আয়েষ মণ্ডল অবশ্য বলেন, “সংখ্যালঘুদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে দফতরের অসহযোগিতার অভিযোগ ঠিক নয়। প্রকৃত ঋণ প্রাপকদের প্রাপ্য ঋণ অবশ্যই দেওয়া হবে।” |