ভিন্ দেশের জেলে শেষ ঠাঁই পেল ঘরছুট
বাবার কাছে ঈদের নতুন জামা চেয়েছিল ছেলেটা। গরিব দোকানি বাবার তা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তাই বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। এর পরেই অপরাধে হাতেখড়ি। বন্ধু মুজাফফর লালা খানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছোটখাটো ছিনতাই। সেটা ২০০৫। সেই শুরু। তার পরে অপরাধই তাকে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের ওকারা জেলার ফরিদকোট গ্রামের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে আনল ভারতের পুণের ইয়েরওয়াডা জেলে। সেখানেই কবর দেওয়া হয়েছে ২৬/১১-র কুচক্রী মহম্মদ আমির আজমল কসাবকে।
সেই আমির আজমল কসাব, যে ন’জন জঙ্গির সঙ্গে সমুদ্রপথে ঢুকে পড়েছিল মুম্বইয়ে। হত্যালীলা চালিয়েছিল শহরের বিভিন্ন জায়গায়। সেই কসাবই আবার রাখির দিন নিজের আইজীবীর কাছ থেকে জানতে চেয়েছে, তাকে কোনও মেয়ে রাখি পরাতে আসেনি! কখনও আবার আর্থার রোড জেলের আন্ডা সেলে বসে খেতে চেয়েছে মাটন বিরিয়ানি। ধরা পড়ার পরে পুলিশকে কাকুতি-মিনতি করেছে তাকে যেন মেরে ফেলা হয়। আবার হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে চিকিৎসকদের বলেছে, “আমি মরতে চাই না, আমাকে স্যালাইন দাও।”
কিন্তু ঘরছুট কসাব কী ভাবে লস্কর-ই-তইবার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে গিয়ে পড়ল? ২০০৫ সালে বাড়ি ছাড়ার পরে ২০০৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঈদের দিনে রাওয়ালপিন্ডিতে অস্ত্র কেনার চেষ্টা করছিল কসাব। লস্করের রাজনৈতিক শাখা জামাত-উদ-দাওয়ার সদস্যরা সেখানে প্রচারপত্র বিলি করছিল। তাদের চোখে পড়ে যায় সুঠাম চেহারার কমবয়সী কসাব। জামাত-উদ-দাওয়ার সদস্যরা তাকে নিয়ে যায় লস্করের জঙ্গি শিবিরে। শুরু হয় কসাবের প্রশিক্ষণ।
কসাব-সহ মোট ২৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরে কসাব-সহ ১০ জনকে বেছে নেওয়া হয় মুম্বইয়ে হামলা চালানোর জন্য। এই জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য লস্কর নেতা জাকিউর রহমান লকভি কসাবের পরিবারকে দেড় লাখ টাকাও দিতে চেয়েছিলেন।
এত কিছুর পরেও কিন্তু ভিন্ দেশের আদালতে দাঁড়িয়ে কখনও অনুতাপের ছায়া মাত্র দেখা যায়নি ২৬/১১-র এই হামলাকারীর চোখে-মুখে। বরং এক এক বার এক এক রকম কথা বলেছে আদালতে দাঁড়িয়ে। কখনও বলেছে, আমি অপরাধী। মৃত্যুদণ্ড দিন। আবার পরের শুনানিতে জোর গলায় বলেছে, “কোনও অন্যায় করিনি। কোনও অনুতাপও নেই।” এ সব কি ভারতের বিচার ব্যবস্থাকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা? হতেই পারে। কারণ সে তো তখন আর মানুষ নয়। সে তখন রোবট। লস্কর-ই-তইবা তার মগজধোলাই করে তাকে যন্ত্রে পরিণত করে দিয়েছে। নিজেই এই কথা স্বীকার করেছে কসাব।
বাড়ি ছেড়ে চলে এলেও ‘জেহাদ’ করতে যাওয়ার আগে নিজের ওকারা গ্রামের বাড়িতে একবার পা রেখেছিল কসাব। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মুম্বই হামলার ছ’মাস আগে বাড়ি এসেছিল কসাব। ‘জেহাদের’ সাফল্য কামনা করে মায়ের আশীর্বাদও চেয়েছিল।
ফরিদকোটের আদি বাসিন্দার বিদ্যের দৌড় ছিল চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। উর্দু স্কুলে পড়াশোনা করেছিল। কিন্তু জঙ্গির বুদ্ধির তারিফ করেছেন পুলিশকর্মী, আদালতের কর্মচারী থেকে শুরু করে সরকারি কৌঁসুলি উজ্জ্বল নিকম, বিশেষ আদালতের বিচারক এম এল তাহিলিয়ানিও। জেলের কর্মীদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টাও করত কসাব। বুদ্ধিমান কসাব সব কিছু শিখেও ফেলত চটপট। খুব তাড়াতাড়ি মরাঠি ভাষাটাও শিখে ফেলছিল সে।
আর্থার রোড জেলের কর্মীরাই জানিয়েছেন, কাসবের এক বার শরীর খারাপ হয়েছিল। এক কর্মী জানতে চান, কেমন আছে সে। কসাব মরাঠিতে জবাব দিয়েছিল, “নাহিন, নাহিন, তাপ নাহিন।” অর্থাৎ তার জ্বর নেই। প্রথম যে মরাঠি বাক্য কসাব শিখেছিল, তা হল ‘তুমহি নিগুন যা’। প্রত্যেক বার আদালতের শুনানি শেষ হওয়ার পরে উজ্জ্বল নিকম কসাবকে বলতেন, “তুমহি নিগুন যা।” বুদ্ধিমান কসাবের বুঝতে দেরি হয়নি এর অর্থ, তুমি যেতে পার। এর পরে কোর্টে কসাবই মাঝেমধ্যে নিকমকে মজা করে বলত “তুমহি নিগুন যা।” তার পর কসাব এবং নিকম দু’জনেই হাসিতে ফেটে পড়তেন। সঙ্গে সঙ্গে কোর্টের গুরুগম্ভীর পরিবেশ হাল্কা। অনেক সময় কসাব কোর্টে ঢুকে বিচারককে বলত গুড মর্নিং। মাঝে মাঝে ইংরেজিতে কথা হলে বিচারক কসাবকে জিজ্ঞেস করতেন, তুমি বুঝতে পারছ। সম্মতিসূচক মাথা নাড়ত জঙ্গি।
গানের ভক্ত ছিল কসাব। তার আইনজীবী জানান, গায়ক মুকেশের বড় ভক্ত ছিল তাঁর মক্কেল। জঙ্গির প্রিয় গান ছিল ‘হাম ছোড় চলে ইস মেহফিল কো, ইয়াদ আয়ে কভি মৎ রোনা...।’
‘মেহফিল’ ছেড়ে সে এখন শুয়ে ভিন্ দেশের জেলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.