ভারত বলছে, জানিয়েছিলাম, সাড়া পাইনি। পাকিস্তান বলছে, তাদের পক্ষ থেকে ঠিক সময়েই সাড়া দেওয়া হয়েছিল।
আজমল কসাবের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন বাগযুদ্ধ। দ্বিপাক্ষিক শান্তি প্রক্রিয়ার উপরে এর কতখানি প্রভাব পড়বে, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। আপাতত দিল্লির অভিযোগ, কসাবের ফাঁসি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে জানানো সত্ত্বেও তারা সেই বার্তা গ্রহণ করেনি। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ এ দিন বলেন, “দেশের আইন অনুযায়ী কসাবের ফাঁসি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আমরা পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রককে জানানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেই বার্তা পাক বিদেশ মন্ত্রক গ্রহণ করেনি। তখন ফ্যাক্স করে বিষয়টি জানানো হয়।” তা ছাড়া কসাবের দেওয়া একটি ঠিকানা কেন্দ্রের কাছে ছিল। সেখানেও খবর গিয়েছিল বলে খুরশিদ জানান।
বার্তা গ্রহণ না করার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। তাদের কথায়, ভারতের দাবি ‘অসত্য’ এবং ‘ভিত্তিহীন’। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মোয়াজ্জম খানের পাল্টা দাবি, গত কাল সন্ধ্যায় ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার কসাবের ফাঁসি সংক্রান্ত নোট নিয়ে পাক বিদেশ মন্ত্রকে এসেছিলেন। বিদেশ মন্ত্রকের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগীয় ডিজি সেই নোট গ্রহণ করে প্রাপ্তি স্বীকারও করে দেন।
এমনিতে পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রহমান মালিকের ভারতে আসার কথা ছিল এই সময়। ক’দিন আগে ভারতের তরফেই তা স্থগিত করা হয়। সরকারি ভাবে বলা হয়েছিল, সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে ২২ তারিখ। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে সংসদে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। আজকের পরে অবধারিত জল্পনা শুরু হয়েছে যে, কসাবের ফাঁসির দিন নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল বলেই কি মালিককে এখন আসতে বারণ করা হল? খুরশিদ অবশ্যই এ কথা মানছেন না। কিন্তু এ কথাও সমান ভাবে সত্য যে, পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলে তাঁর পক্ষে পরিস্থিতিটা খুব স্বাচ্ছন্দ্যের হত না।
পাক প্রশাসন অবশ্য কসাবের ফাঁসি নিয়ে আজ উঁচু গলায় কোনও কথা বলেনি। বিশদ প্রতিক্রিয়াও দেয়নি। ওখানেও নির্বাচনের বেশি দেরি নেই। অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে রয়েছে জারদারি সরকার। সুতরাং কসাব নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর সময় তাদের নেই। মোয়াজ্জম শুধু সতর্ক ভাবে বলেছেন, “আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদেরই বিরোধী। সন্ত্রাস দমনে সকলের সঙ্গে সহযোগিতা করতেও আমরা আগ্রহী।” মোয়াজ্জমের শেষ কথাটা অবশ্য কূটনৈতিক ভাবে আলাদা করে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ভারতের তরফে অবশ্যই কসাবের ফাঁসির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে একটা কড়া বার্তা পাঠানো হল আজ। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ স্পষ্ট বলেছেন, “আমাদের দেশে আইনের শাসন রয়েছে। আশা করব পাকিস্তানেও রয়েছে।” তাঁর দাবি, ভারত যে ভাবে ২৬/১১-র অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল, পাকিস্তানও সেটা করে দেখাক।
চার বছর ধরে ভারত-পাক কূটনৈতিক যুদ্ধে ২৬/১১-ই অন্যতম প্রধান বিষয়। সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল, মুম্বই সন্ত্রাসে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভারতের ক্ষতে মলম লাগবে না। সন্ত্রাস-প্রশ্নে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না করলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের পাক সফরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তার পরেও জটিলতাকে পাশে সরিয়ে রেখে দ্বিপাক্ষিক শান্তি প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হয়েছিল। ভারত-পাক ভিসা চুক্তি কার্যকর করার বিষয়ে কথা বলতে মালিকের এ দেশে আসার কথা ছিল।
এই রকম একটা পরিস্থিতিতে সরকারের আজকের এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি পাক বিচারবিভাগীয় কমিশন ফের কসাবকে জেরা করতে চেয়ে আবেদন করেছিল। তার আগেই কসাবের বিষয়টিতে যবনিকা ফেলে দেওয়া হল।
কসাবের ফাঁসির জের এখন পাক জেলে বন্দি সর্বজিৎ সিংহের উপরে পড়বে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সর্বজিতের হয়ে কথা বলা পাক মানবাধিকার কর্মী আনসার বারনি জানিয়েছেন, কসাবের পরিবার যদি চায়, তা হলে কসাবের দেহ তাদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি তৎপর হবেন। কসাবের নিকটাত্মীয়া শেহনাজ সুগরা সংবাদমাধ্যমের কাছে কসাবের দেহ ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন। কিন্তু রহমান মালিকের দাবি, কসাবের পরিবার এমন কোনও দাবি জানায়নি। বিতর্ক তাই মিটল না। |