পানীয় জলের বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুরের পাঁচটি ব্লকের মানুষকে ফ্লোরাইড-দূষিত পানীয় জল খেতে হচ্ছে। জেলা পরিষদ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ফ্লোরাইড যুক্ত পানীয় জলের হস্তচালিত নলকূপ চিহ্নিত করা হলেও সেগুলির ব্যবহার বন্ধ হয়নি। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাধ্য হয়ে নলকূপগুলির জল ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাতেই চলছে মিড ডে মিলের রান্নাও। মাঝেমধ্যেই নানা ধরনের পেটের রোগ ছড়াচ্ছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদের আরএসপির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান বলেন, “অতিরিক্ত ফ্লোরাইড-প্রবণ এলাকাগুলিতে বিকল্প ব্যবস্থার জন্য পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের খসড়া প্রকল্প রাজ্যের মাধ্যমে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি।” পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, “বিকল্প ব্যবস্থা না করে ওই নলকূপগুলি বন্ধ করব কী করে? তখন বাসিন্দারা পুকুরের জল খেতে বাধ্য হবেন।”
বালুরঘাট ব্লকের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা আত্রেয়ী এবং হিলির বুক চিরে প্রবাহিত যমুনা নদীতে সারা বছর জল থাকে। হরিরামপুরেও প্রচুর জলাশয়ে সারা বছর জল থাকে। কিন্তু গঙ্গারামপুর ও তপন ব্লকে প্রবাহিত পুনর্ভবা এবং বংশীহারি ব্লকে টাঙ্গন নদী ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। গরমের সময় একফোঁটা জল থাকে না পুনর্ভবা ও টাঙ্গনে। কুশমন্ডিতে বড় দিঘিগুলিরও জলও ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। কুমারগঞ্জেও চাষের কাজে ব্যাপক হারে সেচ পাম্প ব্যবহার করে মাটির নীচের জল তুলে নেওয়া হচ্ছে। জলস্তর ক্রমশ নীচে নেমে যাওয়ায় পানীয় জলে মাত্রাতিরিক্ত ফ্লেরাইডের দূষণ অন্যতম কারণ বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ধারাবাহিক জল পরীক্ষা করে নলকূপের জলে বেশি ফ্লোরাইড মিলেছে। আরও পরীক্ষা চলছে।”
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৮টি ব্লকের মধ্যে তপন, গঙ্গারামপুর, বংশীহারী, কুশমন্ডি এবং কুমারগঞ্জ এই ৫টি ব্লকের সরকারি নলকূপের জলে মাত্রার অতিরিক্ত ফ্লোরাইড মিলেছে। ৪২৫০টি নলকূপ ফ্লোরাইড-প্রবণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। ওই নলকূপ জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতের তরফে বসানো হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের খবর, প্রতি লিটার জলে ১.৫ মিলিলিটারের বেশি ফ্লোরাইড স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তপন, গঙ্গারামপুর, কুশমন্ডির মতো এলাকায় প্রতি লিটার জলে আড়াই থেকে তিন মিলিমিটার ফ্লোরাইডের দূষণও নলকূপগুলিতে ধরা পড়েছে। কেবল বালুরঘাট, হরিরামপুর এবং হিলি ব্লকে সহনীয় মাত্রায় রয়েছে ফ্লোরাইড। সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মুর অভিযোগ, “পাইপ লাইনের মাধ্যমে দূষিত এলাকায় জল সরবরাহ কর্মসূচিতে ১০০ কোটি টাকার উপর একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। বিপদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। বিকল্প জলের ব্যবস্থা করার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও টাকা কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার দেয়নি।” জেলাপরিষদের বিরোধী সদস্য তৃণমূলের অখিল বর্মন বলেন, “২০০৯ সাল থেকেই ফ্লোরাইডের দূষণ ধরা পড়ে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়ে এত দিন কেউ উদ্যোগী হননি। জেলা পরিষদ ১০০ দিনের প্রকল্পে নদীবাঁধ উঁচু করে বৃষ্টির জল ধরে রেখে দূষণমুক্ত করে পাইপের মাধ্যমে সরবরাহে উদ্যোগী হতে পারে।” |