নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এত দিন রাজ্যে বিজেপি যা বলে আসছিল, এ বার তা-ই বলল সিপিএম! বিভাজন এবং মেরুকরণের রাজনীতির জন্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তুলল তারা। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের অভিযোগ, সংখ্যালঘু তোষণ করতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা করছেন, তাতে পশ্চিমবঙ্গে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটছে!
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সোমবার অভিযোগ করেছেন, “সরকার কোনও একটা বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ নিলে যা হয়, তা-ই হচ্ছে! সর্বনাশা পথে চলছেন ওঁরা। সুবিধাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছেন! মুখ্যমন্ত্রী বুঝতেই পারছেন না, একটা শক্তির প্রতি পক্ষপাত দেখাব, তাদের ভোট নেব এই দৃষ্টিভঙ্গিতে চললে আর একটা শক্তি মাথাচাড়া দেয়!” তেহট্টের ঘটনার সূত্র ধরে বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন: কেন গুলি চলল, তার তদন্তের চেয়ে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে গুলিচালনার ছবি তোলা হয়েছে, সেটা দেখতে সরকার কেন বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে? |
তার মানে কি তাঁরাও এ বার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ আনছেন? সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবুর ব্যাখ্যা, “সংখ্যালঘু তোষণের চেষ্টা করছেন বলতে পারি। তোষণ চাইলেই কি করতে পারছেন? কেউ তো বোকা নন! মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা করছেন। বিজেপি-কে বাড়তে তিনিই সুযোগ দিচ্ছেন। মেরুকরণের ব্যবস্থা যে ভাবে করেছেন, আগে এ রাজ্যে ছিল না!” বস্তুত, মমতার জমানায় বিজেপি-র সাংগঠনিক বিস্তার যেমন ঘটছে, তেমনই তাদের ভোটের হার বৃদ্ধির লক্ষ্মণ দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
বিজেপি-র বক্তব্য, তৃণমূল নেত্রীর সংখ্যালঘু নীতি এবং মুসলিমদের জন্য প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যর্থতার জন্য সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু, দুই অংশের মানুষের সমর্থনই তাদের দিকে আসছে। আর সিপিএমের ব্যাখ্যা, মমতার সংখ্যালঘু নীতিই বিজেপি-র হাত শক্ত করছে। তবে তা মেরুকরণের রাজনীতির ফসল হিসাবে।
সূর্যবাবু এ দিন বোঝাতে চেয়েছেন, পরিচিতি সত্তার রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে আমদানি করে তৃণমূল নেত্রী ধর্ম-জাতের হিসাবে গরিব মানুষের বিভাজনে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এর মধ্যে থেকে তিনি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন। কিন্তু এ ভাবে চললে তাঁর দলেরও ক্ষতি হবে। সূর্যবাবুর কথায়, “তবে ওঁর দল নিয়ে উনি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু রাজ্যের মানুষের ঐক্য ধারাবাহিক ভাবে ভীতির মুখে। এইটা উদ্বেগজনক।”
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী এ দিনই বিকালে কলকাতা বন্দর এলাকার দইঘাটে গিয়েছিলেন ছট পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে। তার অল্প ক্ষণ পরেই দমদমে দলের প্রয়াত নেতা রবি সরকারের স্মরণসভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু প্রশ্ন তুলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী এখন ছট নিয়ে ব্যস্ত। এর পরে জগদ্ধাত্রী পুজো আসবে। তা-ই নিয়ে ভাববেন। তার পরে বড়দিন এসে পড়বে। পুজো-পার্টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যদি এত ব্যস্ত থাকেন, তা হলে মানুষের কাজে মনোনিবেশ করবেন কখন? মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝবেন!” |