প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
কিষেণজির মৃত্যুর পর এক বছর অতিক্রান্ত। ঠিক এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে মাওবাদীরা। এ বিষয়ে আজ রাজ্য সরকারকে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ওই সতর্কবার্তায় বিশেষ করে রেলের উপর হামলার বিষয়ে সাবধান হতে বলা হয়েছে।
প্রতি বছরই ২ থেকে ৮ ডিসেম্বর, এই এক সপ্তাহ ধরে সিপিআই (মাওবাদী) তাদের সশস্ত্র গেরিলা বাহিনী (পিএলজিএ)-র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে থাকে। এই সপ্তাহটা তাদের গেরিলা বাহিনীতে নতুন নিয়োগ, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সংগঠন মজবুত করার কাজে লাগানো হয়। কিন্তু গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, এ বছর মাওবাদীরা পিএলজিএ-সপ্তাহ পালন এগিয়ে এনেছে। ২ ডিসেম্বরের বদলে এ বার তা শুরু হবে ২৪ নভেম্বর থেকে। কারণ গত বছর ঠিক এই দিনেই জঙ্গলমহলে পুলিশ-সিআরপির অভিযানে মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যু হয়েছিল। অন্যান্য রাজ্যেও এই সময় মাওবাদীরা সক্রিয় হয়ে উঠলেও তাদের মূল লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গই হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, রেল লাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাওবাদীরা দুর্ঘটনা ঘটানোর রাস্তায় হাঁটতে পারে। কারণ তা করা সব থেকে সহজ। একই সঙ্গে কিষেণজির মৃত্যুর ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে যৌথ বাহিনীর উপরেও হামলা করার চেষ্টা চালাবে তারা।
ডিসেম্বরের শুরুতে মাওবাদীদের পিএলজিএ-সপ্তাহ পালনের সময়ে মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিকে সতর্ক থাকার জন্য আগেই রুটিনমাফিক বার্তা পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা এগিয়ে এসেছে, গোয়েন্দাদের থেকে সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিশেষ করে কিষেণজির মৃত্যুর প্রেক্ষিতে এমনটা করা হয়েছে শুনে সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গকে সতর্ক করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “মাওবাদীরা যে জঙ্গলমহলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, সেই রিপোর্টও এসেছে। আমরা কিছু কিছু এলাকাকে অতিরিক্ত স্পর্শকাতর বলেও চিহ্নিত করেছি। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি, জামবনি ও নয়াগ্রামে মাওবাদীদের জমায়েত হয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে।”
গোয়েন্দারা বলছেন, মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি মাওবাদী সংগঠনের পূর্ব ভারতের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু পিএলজিএ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং এই গেরিলা বাহিনীকে ভয়ঙ্কর করে তুলতে কিষেণজির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যখন মেদিনীপুরের বুড়িশোলের জঙ্গলে পুলিশের গুলিতে মারা যান, সে সময় তিনি পিএলজিএ-রই একটি বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। রাজ্যে রাজ্যে যৌথ অভিযানে এখন অনেকটাই পিছু হঠেছে মাওবাদীরা। এই পরিস্থিতিতে কিষেণজির মৃত্যুকে সামনে রেখে মাওবাদী শীর্ষনেতারা এখন তাই ফের গেরিলা বাহিনীকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রের গভীর জঙ্গলে এই বিষয়ে পোস্টার ছাপিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে। |