ফের হেনস্থা কন্ডাক্টরের, ভাড়া-তালিকা কোথায়
শুক্রবার মহাকরণে সংশোধিত ভাড়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সোমবারেও বাস-মালিক বা চালকদের হাতে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি পৌঁছাল না। ফলে ফের ভাড়া নিয়ে যাত্রী-কন্ডাক্টর বচসা, নিগ্রহ। ফের বাস বন্ধ।
রবিবার তারাতলায় কন্ডাক্টর নিগ্রহের পরে সোমবারের ঘটনটি ঘটেছে হাওড়ায়। ভাড়া-বিভ্রান্তির জেরে গ্রামীণ হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন রুটেও এ দিন বাস চলেনি। রবিবার ভাড়া নিয়ে গোলমাল হয়েছিল হুগলিতে। তার প্রতিবাদে হুগলির চার মহকুমার তিনটিতেই (আরামবাগ ছাড়া) এ দিন বাস বন্ধ ছিল। কলকাতা ও শহরতলির সাতটি রুটেও বাসের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে।
রাজ্যে পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার মহাকরণে সংশোধিত ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন। পরিবহণ দফতর থেকে সে দিন বলা হয়েছিল, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি ভাড়ার তালিকা মালিকেরা পেয়ে যাবেন। রবিবারেও তা না-আসার কারণ হিসেবে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেছিলেন, শনি-রবি ছুটি থাকায় তালিকা তৈরি হয়নি। সোমবার বিকেলের মধ্যে তা বার করার চেষ্টা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মদনবাবু। কিন্তু এ দিন সন্ধে পর্যন্ত তালিকা আসেনি। ভাড়া-তালিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে চার দিন ধরে সরকারের এ হেন ‘ঢিলেমিতে’ বাস-মালিকদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অন্য দিকে পার্থবাবু এ দিন সন্ধ্যায় মহাকরণে বলেছেন, “আমরা দেখছি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব কিছু ঠিকঠাক করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
একটা ভাড়ার তালিকা হতে এত দেরি কেন?
মদনবাবু ছুটির কথা বললেও পরিবহণ-সূত্রের খবর: ভাড়া সংশোধন নিয়ে শিল্পমন্ত্রী যে ভাবে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন, তাতে পরিবহণ দফতর কিছুটা বিভ্রান্ত। বস্তুত ৬ নভেম্বর প্রকাশিত বাস-ভাড়া সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি নিয়ে পরোক্ষে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ এনেছেন পার্থবাবু। পরিবহণ-কর্তারা এ বার তাই সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি চূড়ান্ত করার আগে মন্ত্রিগোষ্ঠীর সব সদস্যকে ছুঁইয়ে নিতে চাইছেন। তাতেই দেরি হচ্ছে বলে সূত্রটির দাবি।
এ দিকে বাস-ভাড়া প্রসঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি নিয়ে খুব ব্যস্ত। রাজ্যের সমস্যার দিকে একটু নজর দিলে ভাল হয়। আগে ওঁর রাজ্যের মানুষের আস্থা অর্জন করা দরকার। বাস-ভাড়া নিয়ে এমন অরাজক পরিস্থিতি আগে কেউ দেখেনি!” সূর্যবাবুর কথায়, “এক বাস-ভাড়া নিয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠী এত বার আলোচনা করে সমাধান বার করতে পারছে না! দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ৪০% বেড়েছে। এখন বলছেন, সব ভাড়া পুরনো স্টেজে ফেরত যাবে! পরিবহণ ভেঙে পড়ছে, মানুষ অন্ধকারে।” মালিকেরা কী বলছেন?
বাস-মালিকেরা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি চাইছেন না। সংশোধিত বাস-ভাড়া সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরা ২৩ নভেম্বর বৈঠকে বসছেন। তার আগে বসে যাওয়া বাস পথে নামবে কি না, তা নিয়ে পরিবহণ-কর্তারা সংশয়ে থাকলেও মালিক সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’-এর সরকারি বক্তব্য, নতুন ভাড়া-তালিকা না এলে বসে যাওয়া বাস বেরোবে না। মালিকদের আশঙ্কা, ভাড়ার সরকারি তালিকা মজুত না-থাকলে গণ্ডগোল লেগেই থাকবে, নিগৃহীত হবেন কন্ডাক্টরেরা।
যেমন এ দিন হয়েছেন হাওড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বেলা ১১টা নাগাদ হাওড়া-পার্ক স্ট্রিটগামী সি রুটের এক বাসের কন্ডাক্টর ৬ নভেম্বরের চার্ট অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছিলেন। তা নিয়ে কিছু যাত্রীর সঙ্গে বচসা বাধে। মাঝবয়সী এক যাত্রী পিছনের দরজার কন্ডাক্টরের কলার চেপে ধরেন। আর এক জন চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘মন্ত্রী রাইটার্সে দাঁড়িয়ে বলেছেন ভাড়া কমে গিয়েছে! আমরা সেই ভাড়াই দেব। মাস্তানি হচ্ছে!’’
সহকর্মীকে আক্রান্ত হতে দেখে সামনের গেটের কন্ডাক্টর এগিয়ে আসেন। উত্তেজিত যাত্রীরা তাঁর উপরেও ঝাঁপিয়ে পড়েন। অভিযোগ, তাঁর জামা-গেঞ্জি ছিঁড়ে দেওয়া হয়। বাস তখন বঙ্কিম সেতুর উপরে। চালক সেখানেই বাস থামিয়ে দেন। নিগ্রহের খবর পেয়ে রুটের অন্য বাসগুলোও বসে যায়। বঙ্গবাসী মোড়ের দিক থেকে বঙ্কিম সেতুর উপরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ‘সি’ রুটের তিরিশটি বাস। সংশোধিত ভাড়া-তালিকা না-পাওয়া পর্যন্ত রুটের সমস্ত বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন মালিক-কর্মীরা।
হাওড়ার ঘটনা প্রসঙ্গে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি অরূপেষ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “যা ঘটেছে, তা কাম্য নয়। সমস্যা একটা রয়েছে ঠিকই। তবে এ জন্য কন্ডাক্টদের হেনস্থা করা ঠিক নয়।” অরূপেষবাবু জানান, মঙ্গলবারের মধ্যে নতুন ভাড়ার তালিকা এসে যাবে। তখন সমস্যাও মিটে যাবে বলে তাঁর আশা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.