মন খারাপ করা বিকেল কখন হয়? আড়াইটে বাজলেই কি? তিন দিন ধরে শহরে তো তেমনই হচ্ছে। সোমবারও একই ছবি। বিকেলে সাড়ে তিনটেতেই যেন দিনের আলো নিভু নিভু। কিন্তু সোমবারের বিকেলটা মনোজদের কাছে মন খারাপ করা নয়। বরং বাংলা শিবির বেশ চনমনে। কারণ, গুজরাতের বিরুদ্ধে ইনিংস জয় ও ৭ পয়েন্ট যে প্রায় হাতের মুঠোয়। তাই কম আলোর জন্য খেলা সাময়িক স্থগিত রেখে আম্পায়াররা যখন ক্লাব হাউসে ফেরত গেলেন, তখনও বাংলার ক্রিকেটাররা মাঠে দাঁড়িয়ে। যদি ফের আলোয় ফেরে ইডেন, যদি আবার খেলা শুরু হয়, এই আশায়। শেষ বিকেলে এতটাই চাঙ্গা বাংলা। চার বছর পর রঞ্জি ট্রফিতে তারা বোনাস পয়েন্টের মুখ দেখছে যে।
ততক্ষণে ধরাশায়ী পার্থিব-বাহিনী। দিন্দা, সৌরভ সরকারদের বিষাক্ত পেসের অত্যাচার সামলাতে না পেরে ২৬৬ রানে পিছিয়ে থাকা গুজরাতের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই ফিরে গিয়েছেন ড্রেসিংরুমে। স্কোরবোর্ডে মাত্র ১৮ রান। মনোজের হাত থেকে বেরনো ঘূর্ণি ও বাংলার আক্রমণাত্মক ফিল্ডিংয়ের চাপে পার্থিবদের কাছে ২৬৬-ই হয়ে উঠেছে এক দূর্গম পাহাড়, যা পেরনো আর এভারেস্টে চড়া তাঁদের কাছে প্রায় সমান কঠিন। দিনের শেষে বাংলা অধিনায়ক মনোজের গলাতেও সেই সুরই। তবু কিছুটা বিনয় মিশিয়েই বললেন, “আমাদের বোলাররা যা বল করছে আর উইকেটের যা অবস্থা, তাতে ওদের পক্ষে হার বাঁচানো কিন্তু মোটেই সহজ হবে না।” |
মনোজের ১৯১ ও বহু যুদ্ধের নায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লর ১১৩-র জোড়া সেঞ্চুরির গাঁথনিতে তৈরি ৫২৬ রানের ইমারত গড়ে চায়ের বিরতিতে বাংলা দান ছেড়ে দেওয়ার পর প্রথম ওভারেই গুজরাতের ওপেনার প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চাল ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে যান। দু’বার তাঁর মাথার কাছে বল তোলেন দিন্দা। দ্বিতীয় ওভারেই মনোজের নিখুঁত থ্রো ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে পাঞ্চালকে রান আউট করেন ঋদ্ধি। পরের ওভারেই দিন্দার বল কাট করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে অনুষ্টুপের হাতে ধরা পড়লেন নীরজ পটেল। যেমন আক্রমণাত্মক বোলিং, তেমনই ফিল্ডিং। চতুর্থ ওভারে যখন স্মিত পটেলের স্টাম্প উপড়ে দিলেন সৌরভ, তখন গুজরাত ৮-৩। আলো কমে যাচ্ছে দেখে যখন মনোজ বল হাতে নিলেন, তখন বাংলার ছ’জন ফিল্ডার ঘিরে ধরেছেন আগের তিন ইনিংসে ৯৯-এর উপর গড় রেখে রান করে আসা পার্থিব পটেলকে। পিচের ক্রমবর্ধমান ফাটলগুলো তখন যেন মনোজকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। হঠাৎ একটা নিচু হয়ে যাওয়া বল খেলতে গিয়ে ধোঁকা খেলেন ভারতীয় টেস্ট দলের প্রাক্তন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে। বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে ঋদ্ধির দিকে। কষ্ট করেই তিনি গ্লাভসবন্দি করলেন বলটাকে।
২০০৮-এর ১ ডিসেম্বর ইডেনে ত্রিপুরাকে ইনিংসে হারিয়ে বোনাস পয়েন্ট পাওয়ার পর এ বারই বাংলা ফের বোনাসের সামনে। মাত্র ন’রানের জন্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পঞ্চম ডাবল সেঞ্চুরির সুযোগ ফস্কেও তাই আফসোস নেই মনোজ তিওয়ারির। আরও একটা কারণ, লক্ষ্মীরতন শুক্লর ঝোড়ো সেঞ্চুরি। ১৫টি বাউন্ডারি ও দু’টি ছয় দিয়ে সাজানো ১১৩ এল মাত্র ১১৭ বলে। লং অনের উপর দিয়ে সোজা গ্যালারিতে বল পাঠিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের ছ’নম্বর সেঞ্চুরি করা প্রসঙ্গে লক্ষ্মী অনেকটা সহবাগের মতো বললেন, “ওই সময় এ ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। চার দিকে ফিল্ডার। কী করব? তুলে দিলাম।”
মঙ্গলবার ম্যাচের শেষ দিনে কত তাড়াতাড়ি লক্ষ্মীরা প্রতিদ্বন্দ্বীকে টিম হোটেলে তুলে দেন, সেটাই দেখার।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গুজরাত ২৬০ ও ১৮-৪ (সৌরভ ১-১, মনোজ ১-৬, দিন্দা ১-৯)।
বাংলা ৫২৬-৭ ডিঃ (মনোজ ১৯১, লক্ষ্মীরতন ১১৩, শুভময় ৭৫, অনুষ্টুপ ৬৮)। |