সম্পাদকীয় ২...
দুর্ভাগা দেশ
পুরুলিয়ার একটি গ্রামে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা পুষ্টিকর খাবার সেখানকার উচ্চ বর্ণের মানুষরা মুখে তুলিতেছেন না। কারণ রাঁধুনি তথাকথিত নিম্ন বর্ণের। অঙ্গনওয়াড়িতে পাঠরত শিশুরা যেমন ওই খাবার হইতে বঞ্চিত, তেমনই প্রসূতি মায়েরাও ‘জাত খোয়াইবার’ ভয়ে ‘ছোট জাতের রাঁধুনি’র রান্না করা ওই খাবার মুখে তুলিতেছেন না। এই অনাচার গত দুই বছর ধরিয়া চলিতেছে। বাম আমলেও একই ভাবে নিম্নবর্গীয় রাঁধুনির রান্না-করা খাবার তাঁহাদের ছেলেমেয়েরা খাইবে না, এই জেদের বশে গ্রাম-বাংলার কোথাও-কোথাও উচ্চবর্ণীয়রা তাঁহাদের সন্তানদের ‘মিড-ডে মিল’ বিতরণকারী স্কুলে পাঠানোও বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে এই জাতিভেদের কলঙ্ক ঘুচাইতে ময়দানে নামিতে হইয়াছিল। তাহাতে জাত-পাতের বিভাজন রাজ্যবাসীর মন হইতে মুছিয়া গিয়াছে মনে করার কারণ নাই।
পশ্চিমবঙ্গের অভিজাত উচ্চশিক্ষিতরা পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোয় নিজেরা উদ্ভাসিত হইলেও আপামর রাজ্যবাসীকে আলোকিত করিতে সচেষ্ট হন নাই। জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে কোনও সচেতন সামাজিক সংস্কার আন্দোলন গড়িতেও সে ভাবে সচেষ্ট হন নাই। তাই জ্যোতিবা ফুলে, ভীমরাও অম্বেডকর কিংবা রামস্বামী নাইকার পেরিয়ারের মতো নেতাও এ রাজ্য হইতে উঠিয়া দাঁড়ান নাই। অথচ সংস্কৃতিগর্বী বাঙালির মধ্য শ্রেণি বরাবর অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদপ্রথা হইতে আপনাকে মুক্ত বলিয়া প্রচার করিয়া আত্মতুষ্ট থাকিয়াছে। নগর কলিকাতার প্রান্ত পার হইলেই কিন্তু সামাজিক বৈষম্য প্রকট হইয়াছে। স্কুল-শিক্ষক, সরকারি অন্যান্য চাকুরিতে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীভূত সংস্থাগুলিতেও উচ্চবর্ণীয়দের প্রাধান্য কায়েম হইয়াছে। নিম্ন বর্ণের দুঃখ, গ্লানি ও বৈষম্যজনিত মর্মবেদনার সমব্যথী হইয়া অশ্রুপাত করার রাজনীতিকের অভাব হয় নাই। কিন্তু সেই সমবেদনা জাতিভেদ দূর করার পরিবর্তে সংরক্ষণের খিড়কি দরজা দিয়া তাহাকে বরং চিরস্থায়ী একটি বন্দোবস্তে পরিণত করারই চেষ্টা করিয়াছে।
এই বন্দেবস্তের সুবিধা হইল, এতদ্দ্বারা বিভিন্ন নিম্ন (দলিত) বা মাঝারি (অনগ্রসর) বর্ণের সম্প্রদায়গুলির ভোটপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা কোটার দাবি তুলিয়া প্রতিটি সম্প্রদায়কেই ব্যালট বাক্সে পুরিয়া ফেলা যায়। বিভেদের রেখাগুলিকেও স্থায়ী ভাবে আঁকিয়া রাখা যায়। সংরক্ষণের যে রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে এত কাল তত গুরুত্ব পায় নাই, ইদানীং তাহার অনুশীলনও বেশ চালু হইয়াছে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এখন সংখ্যালঘুদের মধ্যেও অধিক অনগ্রসর ও কম অনগ্রসরদের তালিকা প্রস্তুত করিয়া বঞ্চনার ঐতিহাসিক প্রায়শ্চিত্ত করার প্রয়াস লক্ষণীয়। সেই প্রয়াসের মধ্যেই আবার নিহিত ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ধর্মান্তরকরণের পূর্ববর্তী জাতিগত অস্পৃশ্যতা ও অনগ্রসরতার ভিত্তিতে অনুশীলিত সামাজিক বৈষম্যের ভিত্তিতে শতধাবিভক্ত করিয়া রাখা। এই খণ্ডীকরণের শেষ কোথায়, কে বলিবে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.