|
|
|
|
মমতার বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দাগতে তৈরি কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এ বার সমানে সমানে আক্রমণাত্মক হওয়ার নির্দেশ দিলেন কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরে কংগ্রেস নেতারা মমতাকে নিশানা করে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছেন।
মমতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা ঘোষণা করলেও এখনও পর্যন্ত তাতে সাড়া দেননি মায়াবতী-মুলায়ম। বামেদেরও সেই প্রস্তাবে সায় নেই। আর তাতেই কিছুটা অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে সর্বভারতীয় রাজনীতি, সর্বত্র তৃণমূলকে পাল্টা চাপে ফেলতে তৎপর হয়েছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আজ বলেন, “মমতা যে ভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন, তাতে লোকসভা ভোটের আগে দু’পক্ষের ফের কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ। ফলে তৃণমূল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের নেতাদেরও আর সংযম দেখানোর প্রয়োজন নেই। বরং তাঁরা এ বার পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সেই সংক্রান্ত বিষয়গুলি তুলে ধরবেন।”
সেই সূত্র ধরেই অধীর চৌধুরীদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে, মমতা যে অনৈতিক রাজনীতি করছেন, সেটা তুলে ধরুন। কী সেই অনৈতিক রাজনীতি? দিল্লি বলছে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না বাঁধলে মমতা সংখ্যালঘু ভোট পেতেন না। ১৯ জন সাংসদও হত না। ২০০৪ সালের ফলের দিকে তাকালেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। সেই ভোটে জিতে মমতা এখন কংগ্রেসেরই বিরুদ্ধে যাচ্ছেন। হাইকম্যান্ডের প্রশ্ন, এটা অনৈতিক নয়? এই প্রশ্ন তুলেই অধীরদের প্রচারে নামতে বলছে দিল্লি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্তরেও শুরু হয়ে গিয়েছে আক্রমণ। তার উদাহরণ মিলেছে আজ কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারির বক্তব্যেও। এক প্রশ্নের জবাবে মণীশ বলেন, “ভারতীয় সংসদীয় ইতিহাসে হয়তো এই প্রথম বার ১৯ জন সাংসদের কোনও দল সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চাইছে। আর সে জন্য এমন সব দলের কাছে তৃণমূল সমর্থন চাইছে, যাদের বিরুদ্ধে তিরিশ বছর ধরে তারা লড়াই করেছে।” মমতাকে কটাক্ষ করে মণীশ বলেন, “একটা সময় আসে, যখন আপনাকে রাস্তার লড়াকু নেতা বা নেত্রী থেকে প্রশাসকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আশা করি সেই বিষয়টি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ভেবে দেখবেন।” কংগ্রেসের মূল কৌশল হল, সংখ্যালঘু ভোটের প্রশ্নে মমতাকে চাপে ফেলা। মমতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার ব্যাপারে ঘোষণা করার পর মুহূর্ত থেকেই পশ্চিমবঙ্গের কিছু সংখ্যালঘু নেতা তাঁর সমালোচনা শুরু করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে আজ পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, “তৃণমূলনেত্রী কেন্দ্রে সরকারকে বিপাকে ফেলতে বিজেপি-র সঙ্গে আঁতাঁত করছেন। কিন্তু তা করে আসলে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন তিনি। কারণ, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে তিনি ভোটে জিতেছিলেন।”
পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের পশ্চিমবঙ্গে গিয়েও আক্রমণাত্মক প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। ৮ ডিসেম্বর জঙ্গলমহলে সভা করতে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। পরে রাজ্যের অন্যত্রও সভা করবেন তিনি। সেখানে মমতাকে আক্রমণের পাশাপাশি কেন্দ্র যে গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করেছে, সে কথাও প্রচার করবেন।
তলে তলে বামেদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে কংগ্রেস। উদ্দেশ্য, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মমতাকে একঘরে করে দেওয়া। সিপিএম নেতৃত্বকে কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা এই বার্তাও দিচ্ছেন যে, লোকসভা ভোটে রাজ্যে ত্রিমুখী লড়াই হলে ফের বামেদের আসন বাড়বে। তখন ইউপিএ-১-এর মতো বামেরা ফের কেন্দ্রে প্রভাব বাড়াতে পারবে।
সিপিএমের নেতাদের একাংশের মতে, কে বলতে পারে, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস-তৃণমূল এক হয়ে যাবে না! হতে পারে, তৃণমূলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের আশঙ্কা থেকেই মমতা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন, যাতে প্রকাশ্যে চাপ তৈরি করে তলে তলে রফার পথ খোলা যায়।
কংগ্রেসের এক নেতা অবশ্য বললেন, তৃণমূলের থেকে বামেরা অনেক ভাল শরিক। প্রথম ইউপিএ জমানা তাই অনেক শান্তিপূর্ণ ছিল। তাই বামেদের সঙ্গে ফের সমন্বয়ের সম্ভাবনা তৈরি হলে মন্দ হবে না। অনাস্থা নিয়ে একটা কারণে অবশ্য কংগ্রেস খুশি। তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে যেমন বিজেপির সমর্থনের প্রসঙ্গ টেনে মায়া-মুলায়মকে আলাদা করে সরকারের জয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তেমন অন্য দিকে বিজেপি যে এখনও রাজনৈতিক ভাবে অস্পৃশ্য, তা-ও প্রমাণ করা যাবে। |
|
|
|
|
|