|
|
|
|
তৃণমূল নেত্রীকে একঘরে করাই এখন কারাটদের পাখির চোখ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
সনিয়া গাঁধী নন, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের মূল নিশানা এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল নেত্রীকে রাজনৈতিক ভাবে নিঃসঙ্গ করে দিতে মাঠে নেমেছেন প্রকাশ কারাট। তাঁর দল তো বটেই, অন্য কোনও আঞ্চলিক দলও যাতে মমতার অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন না করে, তা বোঝাতে বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে আজ জানিয়েছেন তিনি। এমনকী এনডিএ-র আহ্বায়ক শরদ যাদবের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। কারাট আত্মবিশ্বাসী যে, মমতা অনাস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ জন সাংসদের সমর্থনই জোগাড় করতে পারবেন না। কারণ বিজেপি-ও শেষ পর্যন্ত মমতাকে সমর্থন করবে না বলেই আশা তাঁর।
তার মধ্যেই আজ মমতা সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তকে ফোন করে প্রস্তাব দিয়েছেন, বামেরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তিনি সমর্থন করতে রাজি। যদিও কারাট জানিয়েছেন, বামেরা আলোচনা করে ঠিক করেছে, অনাস্থা প্রস্তাব এনে কোনও লাভ হবে না। তার বদলে এফডিআইয়ের সিদ্ধান্ত খারিজ করে ভোটাভুটি চেয়ে প্রস্তাব আনাই সেরা কৌশল। সিপিএম নির্ধারিত সময়ের আগে ভোট চায় না। ভোটের আগে যতটা সম্ভব ঘর গুছিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোই বেশি জরুরি বলে মনে করছে সিপিএম। সে দিক থেকে মমতার রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অবসানই এখন সিপিএমের বড় লক্ষ্য।
এর মধ্যেই সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রকাশ কারাট ও সীতারাম ইয়েচুরির দূরত্ব অনেক কমেছে। কারণ কারাট বুঝতে পারছেন, এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গে হারানো জমি পুনর্দখল। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর কিছুটা নরম করতে হলে, হবে। কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে কলহ বজায় থাকলে যে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমেরই লাভ, তা-ও মেনে আজ তিনি বলেন, “যত ক্ষণ দু’পক্ষ ঝগড়া করে, আমাদেরই তো ভাল!”
তবে কারাটের এই কৌশলে ফ্যাকড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সিপিআই। অনাস্থা নিয়ে মমতার আহ্বান আজ কারাট খারিজ করলেও সিপিআই নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, যারাই অনাস্থা আনুক, সরকার বাঁচানোর দায়িত্ব তাঁদের নয়। গত কাল গুরুদাসও একই মন্তব্য করেছিলেন। আজ সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডিও গুরুদাসের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। আবার প্রবীণ সিপিআই নেতা এ বি বর্ধন আজ বলেন, “মমতা বিজেপি-র সমর্থন নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তা বিজেপিরই প্রস্তাব হয়ে দাঁড়াবে। বিজেপির প্রস্তাব আমরা কোনও ভাবেই সমর্থন করব না।”
মমতার অনাস্থা প্রস্তাব প্রশ্নে গুরুদাসবাবুর মন্তব্যে কিছুটা বিভ্রান্ত পশ্চিমবঙ্গ সিপিআই। দলের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার এ দিন বলেন, “গুরুদাসবাবু নিজের মতামত জানিয়েছেন। অনাস্থার ব্যাপারে দলের অবস্থান নিয়ে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিবৃতি দেবেন।” গুরুদাসবাবু কোনও দলকেই অচ্ছুৎ না বললেও তৃণমূল-বিজেপির সঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেওয়ায় আপত্তি রয়েছে সিপিআই-এর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল-বিজেপি যৌথ ভাবে অনাস্থা আনলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো ভোটদানে বিরত থাকতে পারে তারা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়ও সিপিএম প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করে মমতাকে কার্যত একঘরে করে ফেলেছিল। এ বারও কারাট বাকিদের বোঝাতে চাইছেন, ইউপিএ-কে যত ক্ষণ মুলায়ম ও মায়াবতী সমর্থন করবেন, তত ক্ষণ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সমস্যা নেই। অনাস্থায় ভোটাভুটিতে জিতে গেলে আখেরে ইউপিএ-রই লাভ। শুধু এফডিআই নয়, অন্যান্য আর্থিক সংস্কারেও সংসদের সিলমোহর রয়েছে বলে তখন দাবি করবে কংগ্রেস। কারাট মনে করছেন, অনাস্থার বদলে শুধু এফডিআই নিয়ে ভোটাভুটির দাবি করলে বরং সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলা যাবে। কারণ সেখানে কংগ্রেস, এনসিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্স বাদ দিলে সকলেই বিপক্ষে। কারাটের আশা, তাঁর যুক্তি অন্যরাও মানবে। তিনি বলেন, “আমার আশা, তৃণমূল নেতৃত্বও এটা বুঝবেন এবং অন্যদের যুক্তি মেনে নেবেন।”
এর পরেও মমতার অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হলে সিপিএম কী করবে, তা নিয়ে দল এখনই মন্তব্যে নারাজ। কারণ মমতাকে সমর্থন করা সম্ভব নয়। আবার অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারের পক্ষে ভোট দেওয়াও অসম্ভব। ভোটদানে বিরত থাকলে আখেরে সুবিধা হবে সরকারেরই। তখন কংগ্রেস-সিপিএম আঁতাতের অভিযোগ তোলার সুযোগ পাবেন মমতা। যদিও কারাটের কথায়, “এটা কাল্পনিক বিষয়! আমরা তো বলছি, এই প্রস্তাবই আসবে না।” |
|
|
|
|
|