শোকে বনধ কেন, মুখ খুলে গ্রেফতার তরুণী
বার মহারাষ্ট্র। আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ। বালাসাহেব ঠাকরের শেষযাত্রার সময়ে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মুম্বই। সেই পরিস্থিতির সমালোচনা করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকে স্রেফ নিজের মন্তব্য লেখায় গ্রেফতার হতে হল ২১ বছরের কলেজ ছাত্রী শাহিন ধাদাকে। সেই মন্তব্য ‘লাইক’ করায় পুলিশের খপ্পরে পড়লেন শাহিনের বন্ধু রেণু শ্রীনিবাসও।
শিবসেনা নেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই তরুণীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৫ নং ধারায় ধর্মীয় আবেগে আঘাত করার অভিযোগ এনেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ। অভিযোগ আনা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি আইনেও। জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তাঁরা।
ইন্টারনেটে ব্যঙ্গচিত্র বা মন্তব্য করে বা পাঠিয়ে গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ই-মেলে ব্যঙ্গচিত্র পাঠানোয় পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন অম্বিকেশ মহাপাত্র ও সুব্রত সেনগুপ্ত। ঘটনার কড়া সমালোচনা করে তাঁদের দু’জনকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। সেই ক্ষতিপূরণ এখনও দিয়ে উঠতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
মহারাষ্ট্রে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন শিল্পী অসীম ত্রিবেদী। তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রগুলির জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে পড়তে হয়েছিল অসীমকে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপরে আঘাত নিয়ে তাই সাম্প্রতিক কালে প্রশ্ন উঠেছে বার বার।
মহারাষ্ট্রের এই ঘটনা ফের সেই বিতর্ককে উস্কে দিল বলে মনে করা হচ্ছে। শাহিনের গ্রেফতারি নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণকে চিঠি লিখে ঘটনায় জড়িত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কন্ডেয় কাটজু। ঘটনার তদন্তের আদেশ দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।
শনি বা রবিবার কোনও বনধ ডাকেনি বালাসাহেবের দল শিবসেনা। তবে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস’ হিসেবে রবিবার দোকানপাট বন্ধ রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। শনিবারও গোলমালের ভয়ে দোকান বন্ধ করে দেন অনেকে। দু’দিন রাস্তায় নামেনি ট্যাক্সি, অটো। বালাসাহেবের শেষযাত্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষের মিছিলে স্তব্ধ হয়ে যায় মুম্বইয়ের জনজীবন।
ফেসবুকে তার কড়া সমালোচনা করেছিলেন শাহিন। শাহিনের বক্তব্য, “বাল ঠাকরের মতো লোকেরা রোজই মারা যাচ্ছেন। তাতে বন্ধ করার কী প্রয়োজন? বরং ভগৎ সিংহ, সুখদেবের মতো মানুষকে স্মরণ করা উচিত।”
এর পরেই ঠানে এলাকার পালঘরের বাসিন্দা ওই দুই তরুণীর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় ধর্মীয় আবেগে আঘাত করার অভিযোগ করেন কয়েক জন শিবসেনা নেতা। দুই তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত প্রথমে তাঁদের ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের আদেশ দিলেও পরে জামিনে মুক্তি পান তাঁরা। শিবসৈনিকরা শাহিনের কাকার হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় অবশ্য কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে মহারাষ্ট্র পুলিশ তথা সরকার। ঘটনায় জড়িত পুলিশকর্মীদের এখনই সাসপেন্ড করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কন্ডেয় কাটজু। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণকে একটি চিঠিও লিখেছেন তিনি। কাটজুর বক্তব্য, বন্ধের বিরুদ্ধে মন্তব্য ধর্মীয় আবেগে কী ভাবে আঘাত করতে পারে তা তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না।
পরমত সহিষ্ণুতার রাজনীতি অবশ্য শিবসেনার ঘরানা নয়। বরং নিজেদের মত চাপিয়ে দিতে অনেক সময়েই হিংসার আশ্রয় নিয়েছে তারা। কিন্তু, কংগ্রেস-এনসিপি জোট ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও শিবসেনার দাপটে পুলিশের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টুইটারে এক জনের প্রশ্ন, শাহিনের কাকার হাসপাতালে যে শিবসৈনিকরা হামলা চালিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হল না কেন।
ঘটনার সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী মিলিন্দ দেওরাও। কংগ্রেস মুখপাত্র সন্দীপ দীক্ষিতের বক্তব্য, ওই দুই তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়া দুঃখজনক। সমালোচনার ঝড়ে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব দয়াল জানিয়েছেন, ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার কোঙ্কন রেঞ্জের আইজি তদন্তের রিপোর্ট দেবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.