কয়েক বছর আগে চালু হয়েছিল ফুলবাজার। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছে সরাসরি ফুল বিক্রির সুযোগ পেতেন না চাষিরা। মাধ্যম ছিল আড়তদার। ফলে বারবারই ফুল বিক্রি হলেও তার টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার অভিযোগ উঠেছে, কমেছে ফুলবাজারে আসা চাষিদের সংখ্যাও। প্রশ্ন উঠেছে, খোদ রাজ্য সরকারের উদ্যান পালন দফতরের পরিচালনাধীন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ফুলবাজারের চাষিদের সরাসরি ফুল বিক্রির ব্যবস্থা নিয়ে। অবশেষে চাষিদের সমস্যার সুরাহায় নড়েচড়ে বসেছে নবগঠিত পাঁশকুড়া ফুলবাজার পরিচালন সমিতি। আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন পদ্ধতিতে ফুল বেচাকেনার ব্যবস্থা শুরু হবে বলে জানান ফুলবাজার পরিচালন সমিতির সদস্য তথা সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েক। তিনি বলেন, “পাঁশকুড়া ফুলবাজারে আড়তদার প্রথায় ফুল বিক্রির ব্যবস্থা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ফুলবাজার সকলের জন্য খোলা থাকবে। ফুলবাজারে হিমঘরও ওই দিন চালু হবে।”
উদ্যানপালন দফতরের উদ্যোগে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সরকারি খাসজমিতে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ফুলবাজার গড়ে তোলা হয়েছিল। ২০০৪ সালের গোড়ার দিকে উদ্বোধনও হয়। ফুলবাজার পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে পরিচালন সমিতি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু চাষিদের সরাসরি ব্যবসায়ী বা সাধারন ক্রেতাদের ফুল বিক্রির সুযোগ ছিল না। দ্বারস্থ হতে হত আড়তদারদের। আর এই আড়তদারদের কাছ থেকে আর্থিক দিক থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত হতেন চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, আড়তদারদের কাছ থেকে সবসময় ফুল বিক্রির নগদ টাকাও পাওয়া যেতনা। আবার সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির সুযোগ না থাকায় আড়তদারের কাছে ফুল না বিক্রি করলে ফুল নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা থাকত। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, “ফুলবাজারে প্রথমে ৬ জন আড়তদার ছিল। ফুল নিয়েও এদের কয়েকজন টাকা দেননি। এরকম তিনজন আড়তদার বাজারে আসাও বন্ধ করে দেন। ফলে বহু ফুলচাষি টাকা পাননি। অনেক আসাও বন্ধ করে দিয়েছে।”
চলতি বছর নতুন করে ফুলবাজার পরিচালন সমিতি গঠন করেছে রাজ্যের উদ্যান পালন দফতর। নতুন সভাপতি হয়েছেন পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান জাকিউর রহমান খান। নবগঠিত পরিচালন সমিতির উদ্যোগে ফুলবাজার চত্বরে থাকা বন্ধ হিমঘর চালু হয়েছে ১২ অক্টোবর। চাষিরা যাতে সরাসরি ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতার কাছে ফুল বিক্রি করতে পারে সে বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছে পরিচালন সমিতি। গত শুক্রবার পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আড়তদারদের মাধ্যমে নয়, চাষিরা সরাসরি ব্যবসায়ী ও সাধারন ক্রেতাকে ফুলবিক্রি করতে পারবে। ফুলবাজার পরিচালন সমিতির সদস্য নারায়ণ নায়েক বলেন, “আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ফুলবাজার সকলের জন্য খোলা থাকবে। রাত ৮ টা থেকে ১০টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাজার চলবে। ওই দিন থেকেই হিমঘরও চালু হবে।” সন্ধ্যার পাশাপাশি সকালবেলায় ফুলবাজার চালু করার জন্যও উদ্যোগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। |