নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারে রুগ্ণ সংস্থাগুলির আর্থিক বোঝা টেনে বেড়াতে আর রাজি নয় রাজ্য। খাতায়-কলমে এ বার চারটি প্রায় বন্ধ সংস্থা পাকাপাকি ভাবে গুটিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করছে তারা। এই তালিকায় রয়েছে ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (নিসকো), লিলি বিস্কুট, নিও পাইপস এবং ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ।
মহাকরণ সূত্রে খবর, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চারটি সংস্থাকে একটি পরিচালন কর্তৃপক্ষের আওতায় আনা হবে। সব মিলিয়ে এই চার সংস্থায় রয়েছেন ৪২০ জন কর্মী। তাঁদের এই সংস্থাগুলি থেকে সরিয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরে স্থানান্তরিত করা হবে। যাঁরা রাজি হবেন না, তাঁদের দেওয়া হবে আগাম অবসরের সুযোগও।
শুধু ব্যয় সঙ্কোচই নয়। এই চার সংস্থার যে সম্পত্তি রয়েছে, রাজ্য তার থেকেও আয়ের পথ খুঁজছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। যে কারণে ওই সংস্থার কর্মীদের এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে কারখানা, বাড়ি ও লাগোয়া জমি খালি করতে আগ্রহী রাজ্য সরকার। কারণ, মোট ১৫০ একর জমি রয়েছে। যা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে মোটা টাকা আয়ের সম্ভাবনা।
গুটিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া চলাকালীন কর্মীদের জন্য নেওয়া হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা। চার সংস্থার জন্য পৃথক আয়-ব্যয়ের হিসেব নতুন করে আর রাখা হবে না। একটি সংস্থার কর্মী হিসেবে নথিভুক্ত হবেন সবাই। এখন পর্যন্ত ঠিক হয়েছে সমস্ত কর্মীর লিলি বিস্কুটের খাতায় নাম থাকবে। বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের মধ্যে বেতনের তারতম্য রয়েছে। তা বজায় রেখেই বেতনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ দফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, সংস্থা পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করার প্রক্রিয়া সরল করতেই এই ব্যবস্থা।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। প্রস্তাব দ্রুত কার্যকর করতে চায় রাজ্য। চলতি মাসের গোড়ায় বিষয়টি নিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৈঠক ডাকেন। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ও শিল্প পুনর্গঠন সচিব মলয় দে ও সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা।
অর্থের সংস্থান করতে এ ধরনের সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব অবশ্য নতুন নয়। সম্প্রতি পরিবহণ নিগমগুলিকে সংযুক্তিকরণের পথে হেঁটেছে রাজ্য। উদ্বৃত্ত সম্পত্তি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ছাড়পত্রও দিয়েছে সরকার। একই ধাঁচে এই চার সংস্থার জমি ব্যবহার করতে চায় তারা। পার্থবাবু একাধিক বার জানিয়েছেন বন্ধ কারখানার জমি শিল্পের কাজে ব্যবহার করা হবে।
চার সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি নিসকোর। বছর বারো আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই সংস্থার ১২৫ একর জমি রয়েছে বেলুড়ে। তবে সেই জমির মধ্যে ৩০ একর জবরদখল হয়ে গিয়েছে। কারখানার জমি, নিজস্ব রেলওয়ে সাইডিং-এর টানে এক সময় স্টিল অথরিটি এই সংস্থা অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। লিলি বিস্কুট-এর বিশেষ জমি নেই। বারাসতের কারখানার জমি লিজে নেওয়া ছিল। তা কাজে লাগাতে পারবে না সরকার। নিও পাইপস-এর রয়েছে ১০ একরের মতো জমি। বরং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত জমি রয়েছে ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড-এর। বি টি রোডের ধারে রয়েছে মূল কারখানা। সল্টলেকে ব্লাড ব্যাগ তৈরির। দুই জায়গাতেই জমির দাম আকাশছোঁয়া।
তবে রাজ্যের এই পরিকল্পনায় বাদ সাধতে পারে পাওনাদাররা। যেমন, ইলেকট্রো মেডিক্যালের ‘ভেন্ডর’রা হুমকি দিয়েছেন, বকেয়া সাড়ে তিন কোটি টাকা না-মিটিয়ে কর্মীদের সরালে আদালতে যাবেন তাঁরা। |