লাভপুরে জনরোষ
নিষ্ক্রিয় পুলিশ, দুষ্কৃতী রুখতে এককাট্টা গ্রামবাসী
লাভপুরের তৃণমূল কর্মী চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের উপর আক্রমণের ৪৮ ঘন্টা পরেও গ্রেফতার হল না এক জনও। দুষ্কৃতীরাজের প্রতিবাদে ফুঁসছে লাভপুর। “পুলিশ ব্যবস্থা নিক বা না নিক, আমরা আর কোনও দুষ্কৃতীকে এলাকায় ঢুকতে দেব না! দুষ্কৃতীদের যারা আশ্রয় বা মদত দেবে, তাদেরও গ্রামছাড়া করব। যা হওয়ার হবে,” সোমবার সাফ জানালেন গ্রামবাসীরা।
গত শনিবার লাভপুরের ব্রাহ্মণী গ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বিপ্রটিকুরির বুথ কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মণ্ডল খুন হওয়ার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। কাশিয়াড়া, চাপড়া, গঙ্গারামপুর, ব্রাহ্মণী গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশ নিষ্ক্রিয়। তাই সাধারণ মানুষই প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন রাজনৈতিক মদতপ্রাপ্ত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। বামদলগুলি থেকে তৃণমূলে যোগ-দেওয়া সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূলের পুরনো নেতা-কর্মীদের বিরোধেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত, বলছেন তাঁরা।
রেজাউল শেখ ও গোপাল শেখ সিপিএম থেকে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। গোপাল এই হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত । সম্প্রতি হাতিয়া গ্রামে রেজাউলের অত্যাচারে তিতিবিরক্ত হয়ে তার এবং তার আত্মীয়দের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। শনিবার চিত্তরঞ্জনকে খুনের পরেও ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী এবং তৃণমূল সমর্থকদের একটা বড় অংশ রবিবার কাশিয়াড়া, পলশা, খয়েরবুনি গ্রামে গোপালের সাগরেদদের ২৬-২৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেন। স্থানীয় মানুষের ক্ষোভে ইন্ধন জুগিয়েছে পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’। সিপিএম সমর্থক মসলেম শেখ, দেবু দাস, তৃণমূলের রাইহান শেখ, প্রভাত ঘোষ, মাধব মণ্ডলরা বলেন, “বারবার অভিযোগ করেও পুলিশ গোপালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে গোপালের আক্রোশের শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।”
কাশিয়াড়া গ্রামে পুলিশের টহল। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
ক্ষোভের আঁচ পেয়ে সোমবার এলাকায় গিয়ে বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা স্থানীয় মানুষ ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “চিত্তরঞ্জন খুনে ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। তবে কেউ ধরা পড়েনি।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, গত বিধানসভা ভোটে লাভপুর কেন্দ্রের টিকিট পাওয়া নিয়ে বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম এবং দলের জেলা সম্পাদক, লাভপুরের বাকুল গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস ওঝার মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। মনিরুল এক সময় ফরওয়ার্ড ব্লক করতেন। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উপস্থিতিতে ওই দলে যোগ দেন। লাভপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থিপদের অন্যতম দাবিদার দেবাশিসবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, বিশেষ ‘বোঝাপড়া’র ভিত্তিতে অনুব্রতবাবু মনিরুলকে টিকিট পাইয়ে দেন। দুই গোষ্ঠীতে বিরোধ চরমে পৌঁছয়।
চিত্তরঞ্জন-খুনের ঘটনায় এই দলীয় বিভাজন আরও বেআব্রু হয়েছে। নিহতের দাদা মনোরঞ্জন মণ্ডল দাবি করেন, “গোপাল দলবল নিয়ে ভাইকে তাদের গোষ্ঠীতে যোগ দিতে বারবার চাপ দিত। আগেও ভাইকে মারার চেষ্টা হয়েছিল।”
চিত্তরঞ্জনবাবু দেবাশিস-গোষ্ঠীর লোক হিসাবেই পরিচিত। দেবাশিসবাবুর দাবি, “নানা খুনে অভিযুক্ত এবং দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দেওয়া মনিরুল ইসলামকে কর্মী-সমর্থকেরা কেউ প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারেননি।” বিধায়কের পাল্টা দাবি, “দুষ্কৃতীকে মদত দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোনও বোঝাপড়া নয়, যোগ্য বিবেচনা করেই দল টিকিট দিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.