প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে পড়ে ছিল পরিত্যক্ত জমি। গরু-মোষ চরে বেড়িয়ে নোংরা হত সেই জায়গা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার সময়ে নাক-মুখ ঢাকা দিয়ে যেতেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। একশো দিনের কাজে সেই জায়গাই এখন আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতে। চারা গাছের নার্সারি তৈরি করে বছরে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা রোজগার হচ্ছে বলে পঞ্চায়েত সূত্রে খবর।
কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সীতাহাটি গ্রামেই রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। ভাগীরথীর তীরে কেতুগ্রামের একাংশ তো বটেই, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল নদিয়ার বেশ কিছু গ্রামও। কয়েক বছর ধরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নানা ভবন বেহাল। পাঁচিল ভেঙে যাওয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠটি গোচারণভূমি হয়ে উঠেছিল। সেখানে অসামাজিক কাজকর্মও শুরু হয়েছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
বাসিন্দারা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হলে নাকে চাপা দিতে হত। কেন্দ্রের এক কর্মী বলেন, “বছর দুয়েক আগেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছিল। তাই রোগীদের আসতে অনীহা ছিল। রোগী কম হওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসকও তুলে নেওয়া হয়েছিল। এক সময়ে তো আশঙ্কা হয়েছিল, তালা না পড়ে যায়।” |
পরিস্থিতি পাল্টে দিল একশো দিনের কাজের একটি প্রকল্প। বছর দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্প থেকে নার্সারি করা যাবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ কাজে লাগিয়ে ২০১০ সালেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিষ্কার করে সীতাহাটি পঞ্চায়েত। এর পরে ওই অপরিত্যক্ত জায়গায় নার্সারি করতে চেয়ে বিডিও এবং বিএমওএইচ-কে চিঠি পাঠান সীতাহাটি পঞ্চায়েতের কর্তারা। অনুমতি মিললে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে দশ কাঠা জমিতে নার্সারি করে পঞ্চায়েত।
মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া মহকুমার পাঁচ ব্লকে ৪৬টি পঞ্চায়েত রয়েছে। তার মধ্যে সীতাহাটি পঞ্চায়েতেরই একমাত্র নিজস্ব নার্সারি রয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পে দু’জন নিয়মিত চারাগাছের পরিচর্যা করেন। সুনীল মণ্ডল ও আনন্দ বিশ্বাস নামে ওই দুই শ্রমিক বলেন, “মেহগনি, আম, সোনাঝুরি, নিম জাতীয় গাছের চারা লাগানো হয়। এছাড়াও বেশ কিছু ফুল ও পাতাবাহারি গাছের চারা তৈরি করা হয়। এক সঙ্গে প্রায় ত্রিশ হাজার গাছের চারা তৈরি করা হয়ে থাকে।” পঞ্চায়েত প্রধান বিকাশ বিশ্বাস বলেন, “ওই চারাগাছের বেশিরভাগই সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদ্বৃত্ত চারা বিক্রি করে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা আয় হয় বছরে। তা পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়।”
পঞ্চায়েতের আয় বাড়ার পাশাপাশি উন্নতি হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিরও। এলাকাবাসীর দাবি মেনে বছরখানেক আগে বহির্বিভাগে এক চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। বিএমওএইচ তাপস বাগ বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনের চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। আগের তুলনায় এখানে রোগী আসাও বেড়েছে।”
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “সীতাহাটি পঞ্চায়েতের উদ্যোগের কথা জানি। ওদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।” তিনি জানান, রায়না, খণ্ডঘোষ, ভাতার, জামালপুর এলাকার বেশ কিছু পঞ্চায়েত পুকুরপাড়ে ফলের গাছ লাগিয়েছে। জেলাশাসকের দফতর সূত্রে জানা যায়, নার্সারি, বনসৃজনের পাশাপাশি পুকুর ও সেচখাল সংস্কার করা যায়। সেচনালা ও শৌচাগার পাকা করার সুযোগও রয়েছে এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে। জেলাশাসক বলেন, “গত বছর এই সময়ে জেলায় যেখানে ১৩৮ কোটি টাকার কাজ ও ৭১ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করা গিয়েছিল, সেখানে এ বার ৩৬২ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৮৪ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে।” |